পে-কমিশনের কাছে নতুন বেতন কাঠামোর প্রস্তাব: সর্বনিম্ন ২৫ হাজার- সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা

বাংলার ২৪ ঘণ্টা রিপোর্ট:
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (গত বৃহস্পতিবার) অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে পে-কমিশনের কাছে একটি বিশদ প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় সর্বনিম্ন বেতন ২৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা করতে আজ সমিতির নেতাদের সঙ্গে কমিশনের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এই প্রস্তাবনায় বিদ্যমান বেতন কাঠামো বাতিল করে ‘সাকুল্য বেতন’ বা ‘পারিশ্রমিক’ নামে একটি বিকল্প বেতন কাঠামো প্রবর্তনের কথাও বলা হয়েছে। এই বিকল্প পদ্ধতিতে বর্তমান বেতন কাঠামোর কোনো প্রকার ভাতা বা আর্থিক-অনার্থিক সুবিধা রাখা হবে না। সমিতি যুক্তি দিয়েছে যে, উন্নত ও উন্নয়নশীল বহু দেশেই এই ধরনের ‘সাকুল্য বেতন’ কাঠামো চালু আছে।
এছাড়াও, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন কমিটি সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে নিজ পদের দায়িত্বের বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে যে সম্মানি বা ভাতা নিচ্ছেন, তা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য পৃথকভাবে এই সম্মানি গ্রহণ করায় বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, যা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান যে, পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। ডিসেম্বরে চলতি বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হবে এবং আগামী বছরের শুরুর দিকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হতে পারে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এটি মূলত পে-কমিশনের গেজেট প্রকাশের ওপর নির্ভরশীল।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি পে-কমিশনের কাছে দুটি ভিন্ন প্রস্তাব পেশ করেছে। একটিতে বিদ্যমান কাঠামোতে নতুন সুবিধা যোগ করার কথা বলা হয়েছে এবং দ্বিতীয়টিতে, বিদ্যমান বেতন কাঠামো বাতিল করে বিকল্প হিসাবে সাকুল্য বেতন কাঠামো প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রস্তাবে সচিবালয়ে নিয়োজিত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ‘সচিবালয় ভাতা’ ও ‘রেশন সুবিধা’ চালুর দাবি জানানো হয়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় সচিবালয়ের জনবল মূল চালিকাশক্তি। কাজের গুরুত্বের ভিন্নতা বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মীদের ন্যায় তাদেরও বিশেষ ভাতা ও রেশন সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
এছাড়াও, টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বিশেষ ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য সুবিধা পুনর্বহাল করা অথবা চারটি উচ্চতর গ্রেড প্রদানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ও কম ব্যবহৃত গ্রেডগুলো বাদ দিয়ে বেতন স্কেলকে মোট ১২টি গ্রেডে নামিয়ে আনার একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন কাঠামোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের বৃদ্ধির হার অনুসারে অন্যান্য গ্রেডেও একই হারে বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।
প্রযুক্তির উন্নয়ন ও দক্ষতার কারণে কিছু পদকে একই গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে, যেমন অফিস সহায়ক, মেসেঞ্জার ও দপ্তরিকে একীভূত করা। অনুরূপভাবে, কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক এবং ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের একই গ্রেডভুক্ত করা যেতে পারে। অন্যদিকে, দশম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য টিফিন ভাতা ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার এবং যাতায়াত ভাতা ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য সুবিধার মধ্যে শিক্ষাব্যয়ের স্তর অনুযায়ী (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক) প্রতি সন্তানের জন্য (অনধিক দুটি) শিক্ষা সহায়তা ভাতা যথাক্রমে ২ হাজার, ৪ হাজার, ৬ হাজার ও ৮ হাজার টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। চিকিৎসা ভাতার ক্ষেত্রেও বয়স অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত কমপক্ষে ৫ হাজার, ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত ৭ হাজার এবং অবশিষ্ট সময়ের জন্য ১০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে প্রদত্ত ‘নববর্ষ ভাতা’র হার মূল বেতনের ৮০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাবও করা হয়েছে। এছাড়া, কর্মচারীদের জন্য ‘স্বাস্থ্যবিমা’ চালু, কর্মচারীদের করের আওতায় আনা এবং নির্দিষ্ট বয়সের পর প্রদত্ত করের ভিত্তিতে পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানোর জন্য এই পে-কমিশন গঠন করেছে এবং কমিশন ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করবে বলে জানা গেছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল।