কক্সবাজার রেলস্টেশনের পরিচালনার ভার যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে

দেশের প্রথম আন্তর্জাতিকমানের কক্সবাজার রেলস্টেশন নির্মাণের প্রায় দুই বছর পরও অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। অত্যাধুনিক নকশায় নির্মিত এই বিশাল স্থাপনার বিভিন্ন অংশ এখনও ইজারা বা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, যার ফলে এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখন নিজেই স্টেশনটি পরিচালনার ক্ষেত্রে অপারগতা প্রকাশ করছে, এমনকি দেশীয় কোনো একক প্রতিষ্ঠানের ওপরও তারা ভরসা রাখতে রাজি নয়।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে কক্সবাজার রেলস্টেশন পরিচালনার ভার বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ‘পর্যটক’ ও ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামে দুটি ট্রেন চলাচল করলেও স্টেশনের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা চালু হয়নি।
রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, স্টেশনটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে শুধু ইউটিলিটি খাতেই প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। এই বিপুল ব্যয়ভার বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে স্টেশনটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রায় ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয়তলা এই স্টেশন ভবনটি বাইরে থেকে দেখতে একটি আলিশান স্থাপনার মতো। কাচঘেরা এবং আইকনিক ঢংয়ের ছাদ এটিকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। প্রতিটি তলায় ভিন্ন ভিন্ন সুবিধা ও বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও বর্তমানে সবই কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সরেজমিন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকজন লোক ছাড়া পুরো স্টেশনটি প্রায় ফাঁকা এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন।
স্টেশনে কোনো টিকিট কাউন্টার বা দিকনির্দেশনা নেই; চলন্ত সিঁড়িগুলো বন্ধ এবং যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য খোলা একটি টয়লেটও ছিল অনুপযোগী। যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় ট্রেন ছাড়ার ২৫-৩০ মিনিট আগে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, ছয়তলা ভবনের নিচতলা, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় দোকান, এটিএম বুথ, লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট, হোটেল সুবিধা এবং মাল্টিপারপাস হলসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তার কার্যক্রম শুরু হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দরপত্র আহ্বানের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে একাধিকবার চিঠি চালাচালি হয়েছে। রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন কালবেলাকে জানান, তারা দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে এই পরিচালনার দায়িত্ব দিতে চান। তবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান যদি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) অংশগ্রহণ করতে চায়, সেক্ষেত্রেও সুযোগ থাকবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রকাশ করা হবে। এই দরপত্রে পাঁচতারকা হোটেল পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে—এমন প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের জন্য বলা হবে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান এই পরিস্থিতিকে ‘উদ্যোগের অভাব’ বলে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচালনার অভাবে শত কোটি টাকার এই বিশাল স্টেশনটির কোনো সুফল মিলছে না এবং বিনিয়োগের রিটার্ন না আসায় এটি এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তিনি সবকিছুর জন্য বিদেশিদের ওপর নির্ভর না করে দেশীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করার ওপরও জোর দেন।