সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারের ১২ দফা নির্দেশনা

সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় সরকার ভ্রমণের ক্ষেত্রে নতুন কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ-২ শাখা থেকে এই সংক্রান্ত ১২টি নির্দেশনা সংবলিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ধারা-১৩ অনুযায়ী প্রণীত ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩’-এর আলোকে এই নির্দেশনাগুলো কার্যকর করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট ক্রয় করতে হবে, যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড যুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ব্যতীত টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
দ্বীপ ভ্রমণের সময়সূচি ও পর্যটকের উপস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। নভেম্বরের মাসজুড়ে পর্যটকরা কেবল দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন এবং রাত্রিযাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। এছাড়া, দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে।
সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে কোনো ধরনের আলো জ্বালানো বা শব্দ সৃষ্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বারবিকিউ পার্টি করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া কেয়া বনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কচ্ছপ, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ সকল প্রকার মোটরচালিত যানবাহন চলাচলও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নতুন নির্দেশনায় দ্বীপে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক এবং ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব আচরণের অংশ হিসেবে পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরকার আশা করে, এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে।