রোদের আলো কেন শরীরে লাগানো উচিত?

ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম থাকার সাথে এটি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যুক্ত। তাই সুস্থ থাকার জন্য আমাদের রোদে যেতেই হবে। তবে ভিটামিন ডি পাওয়াই সূর্যের একমাত্র উপকারিতা নয়।রোদ দেখলে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়। এর কারণ হলো রোদের সংস্পর্শে আমাদের মস্তিষ্ক সেরোটোনিন নামের হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন আমাদের মন-মেজাজ ভালো করে, মনকে শান্ত রাখতে ও মনোযোগ তৈরি করতেও সহায়তা করে।
ডেস্ক রিপোর্ট: বছরের পর বছর ধরে শুনে আসছি যে সানস্ক্রিন ছাড়া তীব্র রোদে বের হওয়া বিপজ্জনক। কিন্তু সত্য হলো, আমাদের শরীরের জন্য রোদের আলোর দরকার আছে।
সূর্যের আলো মন-মেজাজ ভালো করতে পারে, রক্তচাপ কমাতে পারে, হাড়-পেশী- এমনকি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে পারে।কিছুটা সময় বাইরে বসে থাকা, ত্বকে রোদের উষ্ণতা অনুভব করা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো কাজ করতে পারে।
মনে রাখার বিষয় , সরাসরি সূর্যালোক ছাড়া আমাদের শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না, আর ভিটামিন ডি আমাদের হাড়, পেশী ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
কাজেই, ভিটামিন ডি বাড়াতে হলে রোদে যেতেই হবে।
গ্রীষ্মের মাসগুলোয় যখন উজ্জ্বল রোদের আলো থাকে চারপাশে, তখন শরীর ভিটামিন ডি সংগ্রহ করে রাখে যা শীতকালে কাজে আসে।
ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম থাকার সাথে এটি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যুক্ত। তাই সুস্থ থাকার জন্য আমাদের রোদে যেতেই হবে। তবে ভিটামিন ডি পাওয়াই সূর্যের একমাত্র উপকারিতা নয়।
রোদ দেখলে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়। এর কারণ হলো রোদের সংস্পর্শে আমাদের মস্তিষ্ক সেরোটোনিন নামের হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন আমাদের মন-মেজাজ ভালো করে, মনকে শান্ত রাখতে ও মনোযোগ তৈরি করতেও সহায়তা করে।
এমন কিছু গবেষণা রয়েছে যেগুলোয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে সরাসরি সূর্যের আলো আপনার ত্বকের কোষগুলোকে এন্ডোরফিন (যাকে বলা হয় প্রাকৃতিক ব্যাথা উপশমকারী) তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যা আপনাকে ভালো বোধ করায়।
শরীরের রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে রোদের সরাসরি ভূমিকা আছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, ২০ মিনিটের মতো সময় হাতে রোদ লাগালে তা ত্বকে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করার জন্য যথেষ্ট, যার ফলে রক্ত নালীগুলো প্রসারিত হয়।
বয়স যতই হোক না কেন, হাড়ের জন্য ভিটামিন ডি খুবই দরকারি এক উপাদান। এটি হাড়কে শক্তিশালী করে।
শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ রোধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এই ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
ভিটামিন ডি পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় সূর্যের আলো
আপনি খাবার থেকে কিছু ভিটামিন ডি পেতে পারেন। কিন্তু শুধু খাদ্য থেকে যথেষ্ট পরিমাণে এটা পাওয়া খুব কঠিন।
এই ভিটামিনের সবচেয়ে ভালো খাদ্য উৎস হলো চর্বিযুক্ত মাছ যেমন- স্যামন, ম্যাকেরেল ও সার্ডিনস।
আপনি যদি নিরামিষভোজী হন তাহলে ডিমের কুসুম ও মাশরুমে অল্প পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।
কিন্তু খাবার থেকেই ভিটামিন ডি’র প্রয়োজনীয় পরিমাণের পুরোটা পাওয়া যথেষ্ট কঠিন হবে। তার চেয়ে ঘরের বাইরে কিছুক্ষণ থেকে এই প্রয়োজন মেটানো অনেক সহজ।
একবার সূর্যের আলো আপনার ত্বকে এসে লাগলে শরীর এটিকে শোষণ করতে এবং ভিটামিন ডি-তে রূপান্তর করতে শুরু করবে।
সর্বোত্তম পরিমাণ ভিটামিন ডি তৈরি করতে কী পরিমাণ সূর্যালোকের প্রয়োজন তা আপনার ত্বকের ধরন, আপনি কোথায় থাকেন এবং আপনি কতটা সংবেদনশীল তার ওপর নির্ভর করে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো- রোদে পুড়ে না যাওয়া।
গাঢ় রঙয়ের ত্বকে মেলানিন নামের একটি পদার্থ বেশি থাকে যা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের মতো কাজ করে, বিকিরণ শোষণ করে এবং ত্বককে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এই সুরক্ষা শেষ পর্যন্ত ভিটামিন ডি সহজে তৈরি হতে বাধা দেয়।
ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারের অধ্যাপক অ্যান ওয়েব জানান, দিনের মাঝামাঝি সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপরে, তখন ঘর থেকে বের হওয়াটা আপত্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু দুপুরের খাবারের সময় হাঁটা হতে পারে আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন ডি’র ডোজ পাওয়ার সেরা উপায়।
সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর ত্বকের ক্ষেত্রে বা এমন কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে যা রোদের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়াবে, সেক্ষেত্রে আরো সাবধান হতে হবে।
কিছু লোকের জন্য বাইরে পর্যাপ্ত সময় কাটানো বা খোলা ত্বকে রোধ লাগানো কঠিন হতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি’র ওষুধই কার্যকর হতে পারে বলেও গবেষকরা জানিয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি