হৃদরোগ ও স্ট্রোক: ৯৯ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমাতে পারেন আপনি নিজেই

বাংলার ২৪ ঘণ্টা রিপোর্ট:
বিশ্বজুড়ে আজ মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হৃদরোগ ও স্ট্রোক। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ হারাচ্ছেন জীবন! কখনো হঠাৎ বুক ব্যথা, কখনো মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে। অথচ, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এক আশ্চর্য তথ্য: পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া ৯৯ শতাংশ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণে—আর এই কারণগুলো প্রায় সবই প্রতিরোধযোগ্য।
অর্থাৎ, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কিছু সচেতন পরিবর্তন আনলেই এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচা সম্ভব।
উচ্চ রক্তচাপ: নীরব ঘাতক
উচ্চ রক্তচাপ এমন এক নীরব শত্রু, যা ধীরে ধীরে আমাদের হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই সমস্যা থাকলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
তবে আশার কথা হলো—এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, কম লবণযুক্ত খাদ্য এবং অস্বাস্থ্যকর ফাস্টফুড থেকে দূরে থাকা রক্তচাপ কমাতে দারুণ কার্যকর।
🚭 ধূমপান: হার্টের শত্রু নম্বর ওয়ান
সিগারেটের ধোঁয়া কেবল ফুসফুস নয়, রক্তনালীতেও বিষ ঢালে। ধূমপান রক্তচাপ বাড়ায়, রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়, আর শেষে নিয়ে আসে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক।
ভালো খবর হচ্ছে—ধূমপান বন্ধ করার পর শরীর ধীরে ধীরে নিজের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়। তাই আজই যদি কেউ ধূমপান ছেড়ে দেয়, তার হৃদযন্ত্রের জন্য সেটাই হতে পারে জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত।
⚖️ অতিরিক্ত ওজন ও নিষ্ক্রিয়তা: আধুনিক জীবনের ফাঁদ
বসে বসে কাজ, লিফটের অভ্যাস, বাইরে তৈলাক্ত খাবার—এই অভ্যাসগুলোই শরীরে চর্বি জমায়। আর এই অতিরিক্ত ওজনই বাড়ায় রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা সাইকেল চালানো, মিষ্টি ও ভাজাপোড়া কমানো, এবং পর্যাপ্ত পানি পান—এই সাধারণ অভ্যাসগুলোই পারে হার্টকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে।
🧬 উচ্চ কোলেস্টেরল: রক্তনালীর জ্যাম
আমাদের শরীরে দুটি ধরনের কোলেস্টেরল থাকে—একটি ভালো (এইচডিএল), অন্যটি খারাপ (এলডিএল)।
যখন খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন রক্তনালীগুলোতে জমে ব্লক তৈরি করে। ফলাফল—হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে তাজা ফল, শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার এবং কম তেলে রান্না করা পদ।
⚠️ একাধিক ঝুঁকি মানেই দ্বিগুণ বিপদ
গবেষকরা বলছেন, এসব ঝুঁকি যদি একসাথে থাকে, যেমন—উচ্চ রক্তচাপ ও ধূমপান, বা অতিরিক্ত ওজন ও উচ্চ কোলেস্টেরল—তাহলে হৃদরোগের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই ঝুঁকি কমাতে হলে একসাথে একাধিক দিকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
🩸 নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অপরিহার্য
অনেকেই ভাবেন, শরীরে কোনো উপসর্গ না থাকলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার নেই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা দীর্ঘদিন কোনো লক্ষণ ছাড়াই শরীরে বাসা বাঁধে।
তাই বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত—এটি হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।
🌿 শেষ কথা
হৃদরোগ ও স্ট্রোক আমাদের অভ্যাসের ফল। আমরা যদি সময়মতো সচেতন হই, অল্প কিছু পরিবর্তন আনি—তাহলে ৯৯ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
নিজের শরীরের প্রতি দায়িত্ব নেওয়াই আসলে সবচেয়ে বড় ভালোবাসা। কারণ, হৃদয় যখন সুস্থ, তখনই জীবন সবচেয়ে সুন্দর। ❤️