চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর অবশেষে আদালতের নির্দেশে হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ আদেশ দেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজধানীর রমনা মডেল থানা পুলিশকে।
এদিন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে আদালত এই আদেশ দেন। আদালত সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকার এস্কাটন রোডের নিজ বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তৎকালীন জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহকে। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ প্রথমে ঘটনাটিকে ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে ধরে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু মৃত্যুর পর থেকেই সালমান শাহর পরিবার ও ভক্তরা দাবি করে আসছেন যে এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ১৯৯৭ সালে একটি হত্যা মামলা দায়েরের আবেদন করেন।
তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে সিআইডিকে দেওয়া হয়। তারা ১৯৯৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০২০ সালে পুনরায় তদন্ত করে একই মত দেয়—সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, পারিবারিক ও মানসিক কারণেই সালমান শাহ নিজের জীবন শেষ করেছেন। তবে সালমান শাহর পরিবার সেই প্রতিবেদনের বিরোধিতা করে আসছে। তারা সবসময়ই বলেছেন, এই মৃত্যু ছিল একটি সুপরিকল্পিত হত্যা, যেখানে একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরে মামলা নিয়ে আইনি জটিলতা চলতে থাকে। অবশেষে সালমান শাহর মা আদালতে রিভিশন আবেদন করেন, যাতে পূর্ববর্তী আত্মহত্যার রিপোর্ট বাতিল করে পুনরায় হত্যা মামলা হিসেবে দায়েরের আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন এবং নতুন করে তদন্তের দায়িত্ব দেন রমনা মডেল থানাকে।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ২৯ বছর আগে যেভাবে মাত্র ২৫ বছর বয়সে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়কের মৃত্যু হয়েছিল, সেটির পেছনের প্রকৃত কারণ উদঘাটনের আশা আবারও জেগেছে তার ভক্ত ও পরিবারের মনে।
সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেছেন, “আমি সব সময়ই বিশ্বাস করেছি আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। অবশেষে আদালত আমাদের কথা শুনেছেন। এখন আমি চাই সত্যটা সামনে আসুক।”
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে সালমান শাহ ছিলেন নব্বই দশকের সর্বাধিক জনপ্রিয় নায়ক। অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রেমযুদ্ধ’সহ ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি কোটি দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু শুধু চলচ্চিত্র জগত নয়, পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
আদালতের এই নতুন নির্দেশের ফলে আবারও সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের আলোচনায় এসেছে। রমনা মডেল থানা পুলিশ এখন নতুন করে মামলার নথি ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করবে। সালমান শাহর ভক্ত, সহকর্মী এবং পরিবার সবাই আশা করছেন, এবার হয়তো ২৯ বছরের পুরনো রহস্যের অবসান ঘটবে, এবং প্রিয় নায়কের মৃত্যুর প্রকৃত সত্যটি সামনে আসবে।