সুস্থ থাকলে খালেদা জিয়াই হবেন প্রধানমন্ত্রী: মির্জা ফখরুল

তারেক রহমানের দেশে ফেরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। “নিরাপত্তা, বাসস্থান, অফিসসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে। খুব শিগগিরই তিনি দেশে আসবেন,” বলেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক মাঠে প্রত্যাবর্তন নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য যদি অনুমতি দেয়, তাহলে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন। এটি বিএনপির জন্য এক বিশাল শক্তি হবে।”
বাংলার ২৪ ঘণ্টা রিপোর্ট:
আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি জয়লাভ করে এবং দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী হবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তিনি যদি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণভাবে দায়িত্ব পালনের উপযোগী না হন, তাহলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এমনটাই জানালেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি বলেন, “দলের মধ্যে এ নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। খালেদা জিয়া সুস্থ থাকলে তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। না হলে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই সরকার গঠিত হবে।”
সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বিএনপির নির্বাচন প্রস্তুতি, প্রার্থী বাছাইয়ের নীতিমালা, জাতীয় সরকারের ভবিষ্যৎ, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক বার্তা এবং আওয়ামী লীগের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে দলের অবস্থান।
ফখরুল জানান, বিএনপি নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। অনেক প্রার্থী ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন। যাঁরা বিগত আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং সংগঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন, তাঁদেরকেই গুরুত্ব দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ ছাড়া, তরুণ, নারী ও পেশাজীবীদের উপস্থিতিও এবারের প্রার্থী তালিকায় বাড়বে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনী ইশতেহারে এবার অর্থনীতি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বেকারত্ব হ্রাস, বিনিয়োগে গতি আনা এবং ব্যাংকিং খাত সংস্কার—এই তিনটিকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিএনপি।
সাক্ষাৎকারে ফখরুল বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে গণতন্ত্র হুমকির মুখে ছিল। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান দেশকে একটা নতুন মোড় দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অনেক বেশি আগ্রহী।”
সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিয়ে ফিরেছেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে কী বার্তা পেয়েছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জাতিসংঘসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা বিশ্বাস করে, এই সরকার নয়, একটি নির্বাচিত সরকার আসলেই তারা বাংলাদেশে নতুনভাবে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।”
আওয়ামী লীগের নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং বিচার নিয়ে প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, “যে দল গণহত্যা ও দমন-পীড়নের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিচার হবেই। আর আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে জনগণ থেকে। তাদের ফেরার পথ কঠিন।”
তারেক রহমানের দেশে ফেরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। “নিরাপত্তা, বাসস্থান, অফিসসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে। খুব শিগগিরই তিনি দেশে আসবেন,” বলেন তিনি।
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক মাঠে প্রত্যাবর্তন নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য যদি অনুমতি দেয়, তাহলে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন। এটি বিএনপির জন্য এক বিশাল শক্তি হবে।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু সেটা হবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সহযোগিতা চাই, হস্তক্ষেপ নয়।”
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে জামায়াত প্রসঙ্গও উঠে আসে। বিএনপি-জামায়াতের অতীত সম্পর্ককে অস্বীকার না করে তিনি বলেন, “রাজনীতিতে চিরস্থায়ী মিত্রতা বা বিরোধিতা নেই। এই মুহূর্তে জামায়াতের সঙ্গে আমাদের এমন কোনো জোট নেই, কিন্তু রাজনৈতিক সৌজন্য বজায় রয়েছে।”
জাতীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি এখনো অটুট রয়েছে বলেও জানান ফখরুল। “নির্বাচনের পর শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
শেষ প্রশ্নে যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জনগণ কী আশা করতে পারে—তিনি শুধু বলেন, “আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।”