নির্বাচন প্রস্তুতি: চলতি মাসেই ২০০ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রায় ২০০ আসনে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শেষ করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই সময়ের মধ্যে মনোনীত প্রার্থীদের কাছে হাইকমান্ড থেকে সবুজসংকেত পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে দলের স্থায়ী কমিটির কিছু সদস্য মনে করেন, নির্বাচনী মাঠে বিভ্রান্তি এড়াতে দলীয় এই প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা উচিত। নতুবা নির্বাচনের মাঠে তারা পিছিয়ে পড়তে পারেন।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকেই নিজেদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করছে।
প্রার্থী বাছাই: সূত্র জানায়, প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে পাঁচটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে প্রায় ১৫০ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা দেখছে না দল। তবে একাধিক প্রার্থী ও অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং থাকায় শতাধিক আসনকে ‘জটিলতাপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে সংকট নিরসনে সাংগঠনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, এসব আসনের প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দাবি ও বিভ্রান্তি: এই সাংগঠনিক উদ্যোগের পরই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে গোপনীয়তার সঙ্গে সবুজসংকেত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি। তবে একাধিক প্রার্থী থাকায় গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে একজনকে সবুজসংকেত দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। এমন অবস্থায় দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে। নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের তফসিলের পর পার্লামেন্টারি বোর্ডের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত করার আগে বিভ্রান্তি এড়াতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রয়োজন।
জামায়াতীকরণ নিয়ে উদ্বেগ: স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রশাসনের রদবদল ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কার্যক্রম নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জামায়াতীকরণ করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এসব রদবদল হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। এই উদ্বেগের কথা জানাতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ইসির সঙ্গে বৈঠক: এছাড়া, বৈঠকে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ‘ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল’ প্রস্তুত করার বিষয়ে ইসির উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি আশঙ্কা করছে, সারাদেশে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত হচ্ছে, তার অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির এবং বর্তমানে জামায়াতপন্থি। এমনটা হলে একটি বিশেষ দলের বিজয় নিশ্চিত হতে পারে, যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তাই দলমত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে এই তালিকা প্রণয়নের আহ্বান জানাতে আজ (বুধবার) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। বিএনপি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।