ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য বিএনপির ৩ নির্দেশনা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানামুখী তৎপরতায় ব্যস্ত রয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। কূটনৈতিক এবং সাংগঠনিক কৌশলগত বিষয়গুলোকে সামনে রেখে দলটি সাবধানে অগ্রসর হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভাবমূর্তি বজায় রাখা বিএনপির জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে দলের হাইকমান্ড মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে যেকোনো মূল্যে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা, দলীয় কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করা এবং দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সম্মিলিতভাবে কাজ করা। দলীয় শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে ব্যর্থ হলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করে ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন। যদিও এই আলোচনার জন্য প্রার্থী ডাকার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করেছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বা শীর্ষ নেতার পছন্দের তালিকায় না থাকলে তাদের বৈঠকে ডাকা হচ্ছে না। এছাড়া, পেশাগত কারণে বিদেশে অবস্থানরত অনেক প্রার্থীকেও যথাসময়ে অবহিত করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। বার্তা অনুযায়ী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে হাইকমান্ডের এই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও বিভেদ সৃষ্টির মতো অভিযোগ নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা হচ্ছে।
বিএনপির দপ্তর সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে সাত হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কার, শোকজ, পদাবনতিসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত রবিবার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেট বিভাগের নির্বাচনী আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, মির্জা ফখরুল এই সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের গুরুত্বপূর্ণ বার্তাগুলো মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিকট তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুলের বরাত দিয়ে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, তাদের জানানো হয়েছে যে, একাধিক জরিপের মাধ্যমে দল সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই বাছাই করবে। কেউ যদি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোদ্দা কথা, সকলকে ‘ধানের শীষের’ পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিভিন্ন আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী পৃথক কর্মসূচি পালন করায় স্থানীয় পর্যায়ে যে দ্বন্দ্ব ও বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা নিরসনের জন্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের ডেকে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দল একক প্রার্থী ঘোষণা করার পর সকল মনোনয়নপ্রত্যাশীকে মনোমালিন্য ভুলে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, এবারের প্রার্থী বাছাইয়ে ‘ইয়াং জেনারেশন’, ‘প্রফেশনাল’ এবং নারীরাও যথেষ্ট অগ্রাধিকার পাবেন।
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসন করা বিএনপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা এবং কোন্দলের অভিযোগ নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় অফিসে জমা পড়ছে। অতিসম্প্রতি চাঁদপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার স্থানীয় নেতারা বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং কেন্দ্র অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন জানান, অন্যায়কারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি নরসিংদী জেলা বিএনপির একটি নোটিশের উদাহরণ দেন, যেখানে ৩১ দফা নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দলীয় বিভাজন ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগে রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দল কোনো অপরাধী বা দুষ্কৃতকারীকে প্রশ্রয় দেয় না এবং যারা দলের নাম ভাঙিয়ে অন্যায় করবে বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধেই কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।







