ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহিংসতা, হত্যা, হুমকি, অপহরণ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তৌহিদী জনতা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ সহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এসে তারা এই দাবি উত্থাপন করেন।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ইন্তিফাদা বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সংগঠনের নেতারা ইসকনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— গাজীপুরে ধর্ষণের ঘটনা ঘিরে সংশ্লিষ্ট পুলিশ বিভাগকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া এবং ভিকটিমের প্রতি দোষারোপ বন্ধ করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
এছাড়াও, টঙ্গী এলাকায় অপহরণ-হত্যার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করা হয়। বক্তারা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ‘কাঠামোগত ইসলাম বিদ্বেষ’ রোধে জাতীয় নীতি প্রণয়ন, মুসলিম নারীর সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন গঠন এবং ইসলামবিদ্বেষ-বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ইমাম, সক্রিয় নাগরিক ও সংগঠনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও জুমা নামাজ শেষে কামরাঙ্গীরচরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বক্তারা অভিযোগ করেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে মন্দির স্থাপন ও হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার আড়ালে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা ইসকনকে ‘অভিন্ন ভারত’ ঘোষণার দাবিদার, অর্থ পাচারকারী এবং ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে মুসলিম নারীদের ব্ল্যাকমেল ও ধর্ষণের মতো অপকর্মে জড়িত বলেও দাবি করেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, ইসকন মুসলমানদের পবিত্র কোরআন পোড়ানো এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের উদ্দেশ্যে ইসরাইলি কায়দায় দেশের বিভিন্ন জেলায় একের পর এক আস্তানা গড়ে তুলছে। তাই এই ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ সকল কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানানো হয়। ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আসাদগেট ও জিগাতলাতেও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত মিছিল করে এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘ইসকন তুই জঙ্গি, স্বৈরাচারের সঙ্গী’ ও ‘জঙ্গিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’ সহ নানা স্লোগান দেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরাও মুসলিম নারী ধর্ষণ ও আলেমদের অপহরণ-গুমের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশ করেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরাও পৃথক কর্মসূচিতে অংশ নেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চবিয়ান দ্বীনি পরিবার’ এর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা গাজীপুরের শিশু আশা মনি ধর্ষণ, খতিব মুহিব্বুল্লাহকে গুমের চেষ্টা এবং অ্যাডভোকেট আলিফ হত্যার সাথে ইসকনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে দ্রুত বিচার দাবি করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে মিছিল ও মানববন্ধন করেন।
গাজীপুরে আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা ইসকনের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন, নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং খতিব হাবিবুল্লাহ মিয়া হত্যার চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। রংপুরে সর্বস্তরের সচেতন মুসলিম সমাজ মুফতি মহিবুল্লাহকে গুমকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ করে। এছাড়াও কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, টঙ্গী, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, সিলেট, চট্টগ্রামের পটিয়া, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও ভোলার চরফ্যাশনসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় জুমার নামাজের পর তৌহিদী জনতার উদ্যোগে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।








