রেকর্ড সংশোধন মামলা চিরতরে বন্ধ: আদালত গ্রহণ করবে না নতুন আবেদন

সরকার বলছে, পুরোনো এনালগ পদ্ধতির রেকর্ডে বারবার ভুল দেখা যাওয়ায় এবার সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নতুন রেকর্ড তৈরি করা হচ্ছে, যার নাম বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (BDS)।এই জরিপে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। বিডিএস রেকর্ডে শতভাগ নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত তথ্য থাকবে—ফলে ভবিষ্যতে আর মামলা করার প্রয়োজন হবে না।
বাংলার ২৪ ঘণ্টা রিপোর্ট:
রেকর্ড বা খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য আর আদালতে মামলা করা যাবে না—এমন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সরকারের এই নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২৬ সাল থেকে আদালত কোনো রেকর্ড সংশোধন মামলা গ্রহণ করবে না, এবং চলমান মামলাগুলোও ধীরে ধীরে নিষ্পত্তি করে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এতদিন সিএস, এসএ, আরএস, বিএস বা সিটিজ জরিপে কোনো ভুল ধরা পড়লে তা দেওয়ানী আদালতে মামলা করে সংশোধনের সুযোগ ছিল। তবে নতুন সিদ্ধান্তে সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
ভূমি উপদেষ্টা ও ভূমি সচিব জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের শুরু থেকে এই নীতি কার্যকর হবে। অর্থাৎ, ওই সময় থেকে আদালত কোনো রেকর্ড সংশোধন মামলা রিসিভ করবে না, এমনকি কেউ মামলা দায়ের করলেও আদালত গ্রহণ করবে না।
সরকার বলছে, পুরোনো এনালগ পদ্ধতির রেকর্ডে বারবার ভুল দেখা যাওয়ায় এবার সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নতুন রেকর্ড তৈরি করা হচ্ছে, যার নাম বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (BDS)।
এই জরিপে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। বিডিএস রেকর্ডে শতভাগ নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত তথ্য থাকবে—ফলে ভবিষ্যতে আর মামলা করার প্রয়োজন হবে না।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ যেসব রেকর্ড সংশোধন মামলা এখনো আদালতে চলমান রয়েছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে—
বাদী বা বিবাদী সর্বোচ্চ দুইবার সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারবেন।
সাক্ষীরা এখন থেকে ভিডিও কল, ইমেইল বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সাক্ষ্য দিতে পারবেন।
মিথ্যা মামলা বা হয়রানিমূলক মামলা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে জরিমানা ও কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৬ সালে দেশব্যাপী বিডিএস জরিপ কার্যক্রম শুরু হলে, ভূমি মালিকরা মাঠ পর্যায়েই জরিপকারীর কাছে আপত্তি ও সংশোধনের আবেদন জানাতে পারবেন।
যদি কারও রেকর্ড বা দাগ নম্বরে ভুল থাকে, সঙ্গে সঙ্গে তা ডিজিটালভাবে সংশোধন করা হবে।
এতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘোরার প্রয়োজন থাকবে না।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ দেওয়ানী মামলা চলমান, যার মধ্যে ৭০ শতাংশই ভূমি রেকর্ড সংশোধন সংক্রান্ত। এসব মামলার কারণে ভূমি মালিকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি সরকারও ভূমি কর আদায়ে বঞ্চিত হচ্ছে।
নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে এই দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তি চিরতরে শেষ হবে বলে আশা করছে ভূমি মন্ত্রণালয়।