‘শেখ হাসিনা পালিয়ে যাননি, যেতে বাধ্য হয়েছেন’: ডিফেন্স আইনজীবী

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পালিয়ে যাননি, বরং যেতে বাধ্য হয়েছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আমির হোসেন বলেন, প্রসিকিউশন পক্ষ তাদের যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ‘পালিয়ে গিয়েছেন’ বলে যে দাবি করেছে, সেই প্রেক্ষাপটে তিনি জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার আসামি পালিয়ে যাননি। উনি এ দেশ থেকেই যেতে চাননি, তা বিভিন্ন পত্রপত্রিকাসহ প্রত্যেকটি জায়গায় এসেছে। উনি (শেখ হাসিনা) এ কথাও বলেছেন যে- আমাকে প্রয়োজনে এখানে মাটি দেন, হত্যা করেন, তবু আমি যাবো না। কিন্তু প্রেক্ষাপট এমন দাঁড়িয়েছে, উনাকে যেতে বাধ্য হয়েছেন। উনি হেলিকপ্টারে গেছেন। দেশের মানুষ দেখেছেন। অতএব পালিয়ে যাওয়া বলে চোরের মতো লুকিয়ে যাওয়াটাকে। তবে এই পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টা আমি ডিফেন্ড করেছি।”
দ্বিতীয়ত, প্রসিকিউশনের ‘প্রজন্মকে শেষ করে দিতে চেয়েছে আমার আসামিরা’ মন্তব্যের জবাবে ডিফেন্স আইনজীবী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ হতে হলে একটি সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা থাকতে হয়, যেমনটি হিটলার ইহুদিদের ক্ষেত্রে করেছিলেন। তিনি মনে করেন, এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের সেই সংজ্ঞা প্রযোজ্য নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এটাই আমার মূল বক্তব্য। তাই বাদিপক্ষ যেমন ন্যায়বিচার চান, আসামিপক্ষে আমরাও ন্যায়বিচার চাই। তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব ট্রাইব্যুনালের।”
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা বিদেশে থাকা অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আসেননি। আমির হোসেন বলেন, “আমিও সেটার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছি, যে কারণে উনি আসেননি, একই কারণে শেখ হাসিনাও আসেননি।”
আমির হোসেন দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাশা করেন যে রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণ করতে সক্ষম হননি। তাই তারা খালাস পাবেন এবং সসম্মানে খালাস পাবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক খণ্ডনের শেষ দিন ছিল আজ। এদিন তাদের বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আগামী ১৩ নভেম্বর এই মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ করবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যেখানে সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এই মামলার প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দিয়েছিল।