জুলাই গণহত্যা : ভুল স্বীকার করলেন জয়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ থেকে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় স্বীকার করেছেন, তার মায়ের সরকারের সময়ে কিছু ভুল হয়েছিল। তবে তিনি জাতিসংঘের সেই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে—ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে সরকার ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় এই মন্তব্য করেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুলে নেয় এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না করে, তাহলে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল থাকবে।
তিনি বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে, নির্বাচন হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু। এখন যা হচ্ছে, তা আসলে আমার মা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দূরে রাখার রাজনৈতিক কৌশল।”
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। এই নির্বাচন হবে গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম নির্বাচন, যে অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে এবং তিনি ভারতে পালিয়ে যান। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন দিন পর ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরে মে মাসে তার সরকার আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এবং দলটির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে। অনেকেই দেশ ছেড়ে ভারতে ও অন্যত্র পালিয়ে যান। হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে শুরু করে দুর্নীতির নানা অভিযোগে একাধিক মামলা চলছে।
জয় বলেন, “যদি আওয়ামী লীগকে যথেষ্ট সময় না দেওয়া হয় প্রস্তুতির জন্য, তাহলে এই নির্বাচন জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হবে না। এখনই আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে দেওয়া হচ্ছে না—শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা উঠলেও নির্বাচন হবে এক প্রহসন।”
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা সম্প্রতি ইউনূসের কাছে এক যৌথ চিঠি পাঠিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর ‘অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
ইসলামপন্থীদের নিয়ে সতর্কতা ও অভিযোগ: বর্তমানে বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের সংসদীয় গণতন্ত্রে ৫২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর এখনো দেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর হয়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি আসন্ন নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবর্তন হলো—এক দশকেরও বেশি সময় পর নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে ফিরে এসেছে এবং অন্যান্য ইসলামপন্থি দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। জয় সতর্ক করেছেন, যদি অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে, ইসলামপন্থিরা লাভবান হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, ইউনূস তাদের মদদ দিচ্ছেন এবং ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আয়োজনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আনতে চান।
মানবাধিকার ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য: মানবাধিকার ইস্যুতে জয় বলেন, “সব হত্যাকাণ্ডই দুঃখজনক এবং তদন্ত হওয়া উচিত।” তবে তিনি অভিযোগ করেন, ইউনূস সরকার অভ্যুত্থানকালে সহিংসতাকারীদের দায়মুক্তি দিয়েছে এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘ডাইনী শিকার অভিযান’ শুরু করেছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একজন প্রসিকিউটর হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেছেন। হাসিনা কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেননি এবং এই বিচারকে তিনি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে অভিহিত করেছেন।
জয় আরও দাবি করেন, ইউনূস সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড ভয়াবহ। তার ভাষায়, “আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা–কর্মী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে, জামিন পাচ্ছেন না; প্রায় ৫০০ নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ৩১ জন মারা গেছেন হেফাজতে।” তিনি অভিযোগ করেন, সংখ্যালঘুরাও এখন টার্গেট, বিশেষ করে হিন্দুরা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।








