এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বাড়ল : আন্দোলন স্থগিত

বাংলার ২৪ ঘণ্টা রিপোর্ট:
দীর্ঘদিনের দাবির মুখে অবশেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
সরকার জানিয়েছে, এই বাড়িভাতা দুই ধাপে কার্যকর হবে। প্রথম ধাপে আগামী ১ নভেম্বর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ৭.৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন। পরবর্তী অর্থবছর থেকে আরও ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে মোট ১৫ শতাংশ হারে ভাতা কার্যকর করা হবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ দাবি পূরণ হলো।
বৈঠক শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, “শতাংশ হারে এই ভাতা নিশ্চিত করতে পেরে একজন শিক্ষক হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। শিক্ষকরা আরও বেশি সম্মানের দাবিদার, এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রের সচেষ্ট থাকা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “এই পথটা সহজ ছিল না। নানা মতভেদ, বিতর্ক ও অভিযোগ ছিল। কিন্তু কোনো বিতর্কে জড়িয়ে না গিয়ে সরকার একটি ন্যায্য ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদ, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়েছে।”
অধ্যাপক আবরার এই সমঝোতাকে “সম্মান, সংলাপ ও সমঝোতার জয়” বলে উল্লেখ করেন। তিনি শিক্ষক সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এখন সময় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর। আজকের এই সমঝোতা হোক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া এবং শিক্ষাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর নতুন সূচনা।”
আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা:
এদিকে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের পর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাঁদের চলমান আন্দোলন স্থগিত করেছেন। দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মতিপত্র জারি করার পর এই ঘোষণা আসে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজি বলেন, “সরকার আমাদের দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তাই আমরা আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল থেকে শিক্ষকরা নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন।”
এর আগে, গত ১৯ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে বাড়িভাড়া ভাতা ৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। তবে শিক্ষক সমাজ সেই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। তারা ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়ার দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন।
শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে বহু বিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। অবশেষে আজ নতুন সম্মতিপত্র জারির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান ঘটে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে শিক্ষক সমাজে স্বস্তির সঞ্চার হয়েছে। অনেক শিক্ষক জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা এই বাড়িভাতা বৃদ্ধির অপেক্ষায় ছিলেন। এতে তাদের আর্থিক চাপ কিছুটা লাঘব হবে এবং পেশার প্রতি সম্মানও বাড়বে।