বাংলাদেশ-তুরস্ক আকাশ প্রতিরক্ষা চুক্তি: অস্বস্তিতে নয়াদিল্লি

এই পদক্ষেপ ভারতের জন্যও এক নতুন বার্তা। যদিও বাংলাদেশের সামরিক উন্নয়ন ভারতের ওপর সরাসরি হুমকি নয়, তবে এতে নয়াদিল্লির কৌশলগত সুবিধা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন পড়বে।বিশেষ করে সীমান্তবর্তী সংক্ষিপ্ত ও নাজুক অঞ্চল, যেমন সিলিগুড়ি করিডোর (India’s “Chicken’s Neck”)‑এর ক্ষেত্রে ভারতের জন্য রয়েছে কৌশলগত উদ্বেগ। ঢাকার হাতে উন্নত আকাশ‑প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গেলে সেই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে ভারতের সুবিধা কমে যেতে পারে।
বাংলার ২৪ ঘণ্টা রিপোর্ট:
বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে তুরস্কের তৈরি দূর-পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এসআইপিইআর’, পাশাপাশি রয়েছে যৌথভাবে উন্নত ড্রোন উৎপাদনের পরিকল্পনাও।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল একটি অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি নয়, বরং বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে একাধিকবার বাংলাদেশের ভূখণ্ডে গোলা ছোড়া ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বর্তমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সীমিত ও পুরোনো হওয়ায় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছিল না।
চুক্তির ফলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ ও সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
তুরস্কের এসআইপিইআর হচ্ছে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম দূর-পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বাংলাদেশ এটির প্রথম বিদেশি ক্রেতা হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি তুরস্কের জন্যও একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য।
চুক্তিতে তুর্কি ড্রোনের যৌথ উৎপাদনের কথাও রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে নিজের প্রযুক্তি, মানবসম্পদ ও শিল্পখাতে বিনিয়োগ করে নিজস্ব গোয়েন্দা, নজরদারি ও আঘাত হানার ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ ভারতের জন্যও এক নতুন বার্তা। যদিও বাংলাদেশের সামরিক উন্নয়ন ভারতের ওপর সরাসরি হুমকি নয়, তবে এতে নয়াদিল্লির কৌশলগত সুবিধা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন পড়বে।
বিশেষ করে সীমান্তবর্তী সংক্ষিপ্ত ও নাজুক অঞ্চল, যেমন সিলিগুড়ি করিডোর (India’s “Chicken’s Neck”)‑এর ক্ষেত্রে ভারতের জন্য রয়েছে কৌশলগত উদ্বেগ। ঢাকার হাতে উন্নত আকাশ‑প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গেলে সেই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে ভারতের সুবিধা কমে যেতে পারে।
চুক্তিটি তুরস্কের ‘এশিয়া অ্যানিউ’ নীতির অংশ, যার মাধ্যমে দেশটি এশিয়ায় বাণিজ্য ও সামরিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রায় ন্যাটো মানের হলেও পশ্চিমা দেশের মতো কঠোর রাজনৈতিক শর্ত নেই, যা অনেক দেশের জন্য আকর্ষণীয়।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ কেবল শক্তিশালী সামরিক প্রতিরক্ষা গড়ছে না, বরং চীন-ভারত-পশ্চিমা বলয়ের বাইরে নতুন একটি নিরপেক্ষ কৌশলগত জায়গা তৈরি করছে।
বাংলাদেশ সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ না করলেও, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, “চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তা কাঠামোয় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।”