মুখোমুখি সরকার-আইএমএফ: চার বিষয়ে তীব্র আপত্তি!

এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহ বেশিই আছে। তাই এ সময়ে আইএমএফের ঋণ না পেলেও অর্থনীতিতে তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। অর্থ বিভাগ বলছে, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের শর্ত পূরণে পর্যাপ্ত রিজার্ভ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে আরও ১০৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলার ২৪ ঘন্টা ডেস্ক:
অর্থনৈতিক খাতে সরকারের গৃহীত চারটি বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ বিষয়গুলো হলো- আর্থিক নীতি, রাজস্ব খাতের সংস্কার ও এনবিআরের বিলুপ্তি, খেলাপি কমাতে না পারা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার ক্রয় করা। এসব বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী কিস্তির অর্থ ছাড় করতে চায় না আইএমএফ। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
একই সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া আর্থিক খাতের সংস্কারের নীতিগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে ঠিকঠাক পরিপালন করবে কি না-তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। বিশেষ করে চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহ বেশি এমন যুক্তি দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনছে। যদিও এর আগে টানা কয়েক বছর ডলার বিক্রি করেছে।
তবে গত এক সপ্তাহে ডলারের দাম আবারও বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোতে পণ্য আমদানির এলসি খোলার হার বেড়েছে। আবার গত সাড়ে তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ২ বিলিয়নের বেশি ডলার কিনেছে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে। এসব বিষয় নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে আইএমএফ।
এ ছাড়া কর জিডিপি রেশিও বৃদ্ধিতে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় আইএমএফ মনে করে রাজস্ব খাতের সংস্কার এখনো সঠিক পথে আসেনি। এ ছাড়া নির্বাচিত সরকার এসে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলো মেনে নেবে কি না-তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এজন্য সংস্থাটি বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর নতুন যে সরকার আসবে তখন সে সরকারের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে ৪ দশমিক ৭ ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো ছাড় করা হবে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহ বেশিই আছে। তাই এ সময়ে আইএমএফের ঋণ না পেলেও অর্থনীতিতে তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। অর্থ বিভাগ বলছে, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের শর্ত পূরণে পর্যাপ্ত রিজার্ভ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে আরও ১০৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণের কিস্তি ও বিল পরিশোধ করা সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে আগামী ২৯ অক্টোবর আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল অন্তত দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকায় আসছে। সে সময় ওই দলটি ষষ্ঠ কিস্তির জন্য গত জুনভিত্তিক শর্তগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। মিশনটি এই সফরে অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে।
সে সময় অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি ও আইএমএফের দেওয়া শর্তগুলোর পরিপালন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবে। দুই সপ্তাহ পর মিশনটি ওয়াশিংটন ফিরে গিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে আইএমএফ সদর দপ্তরে। তারপর সংস্থাটির বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাকি অর্থ কবে নাগাদ পেতে পারে।
এর আগে আইএমএফ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে। কিন্তু গত জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি অনুমোদনের মাধ্যমে মূল ঋণের পরিমাণ ৮০ কোটি ডলার বাড়িয়ে ৫৫০ কোটি ডলার করা হয়। আট কিস্তিতে এ অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে। এ পর্যন্ত আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচি থেকে ৩৬০ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি তো হয়েছেই। এটা তো স্বীকার করতেই হবে। তবে এটাও ঠিক যে এ সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমায় নতুন করে তেমন কোনো বিনিয়োগ আসেনি।
আর রাজস্ব খাতের সংস্কার, নীতি, আর্থিক নীতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনাবেচা নিয়ে সংস্থাটি যে সংশয় প্রকাশ করেছে এগুলো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে নেগোসিয়েশনের বিষয়। ২৯ অক্টোবর আইএমএফের যে মিশনটি ঢাকায় আসবে তারা তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলাপ-আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আইএমএফের দেওয়া শর্তগুলোর বেশির ভাগই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, রিজার্ভ সংরক্ষণ ও বকেয়া বিল এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ, আর্থিক খাতের নানান রকম সংস্কারে বাংলাদেশ গত এক বছরে অভাবনীয় কিছু কাজ করেছে। যার মধ্যে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ চালু করা। তবে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমার চেয়ে আরও অনেক বেড়েছে। এটা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএমএফ।







