বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ায় ৫ সহস্রাধিক গ্রাহকের প্রায় ২শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রেইনবো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর চেয়ারম্যান আমিরুজ্জামান পিন্টুর বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন আমানতকারীরা। সোমবার (২ জুন) দুপুরের দিকে সহস্রাধিক গ্রাহক বগুড়া শহরস্থ মালগ্রাম মধ্যপাড়া খন্দকারপাড়ায় রেইনবো কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান পিন্টুর বাসভবন ঘেরাও করেন।
খবর পেয়ে শহরের কলোনীস্থ রেইনবো হসপিটালের সামনেও আমানতকারীসহ উৎসুক জনতা ভিড় করে। পরে পুলিশ এসে আমানতকারী ও পরিচালকদের সাথে কথা বলে উদ্যোক্তারা এক মাসের মধ্যে আমানতের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে আমানতকারীরা অবস্থান ত্যাগ করে চলে যান।
জানা যায়, রেইনবো কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান আমিরুজ্জামান পিন্টুসহ বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা রেইনবো কো-অপারেটিভ সোসাইটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেইনবো ই-কমার্স, রেইনবো কমিউনিটি হসপিটাল, রেইনবো হোমস, রেইনবো কৃষি উন্নয়ন সংস্থা, রেইনবো কনজ্যুমারস অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস, রেইনবো এয়ার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই কাগুজে। বাস্তবে রেইনবো হসপিটাল ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই।
বিনিয়োগকারীদের একজন বগুড়া সদরের নারুলী এলাকার বুলু মিয়ার পুত্র ফয়সাল। তিনি একজন প্রবাসী। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর আগে বিনিয়োগ করেন ৪০ লাখ টাকা। মাসে তাকে ৬০ হাজার টাকা করে মুনাফা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এক বছর হলো তাকে আর কোনো মুনাফা দেয়া হয়না। মূলধন ফেরত চেয়ে তিনি বছরখানেক হলো ঘুরছেন। কিন্তু তার টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছেনা।
আরেক বিনিয়োগকারী ববি। তিনিও নারুলী এলাকার রুহুল আমিন মহররমের ছেলে। তিনিও একজন প্রবাসী। তিনি ২ বছর আগে জমা রাখেন ১৫ লাখ টাকা। সমিতির পরিস্থিতি ভালো না শুনে তিনিও মূলধন ফেরতের জন্য ঘুরছেন বছরখানেক হলো।
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ফজলুর রহমান। তাঁর বাসা শহরের খান্দার এলাকায়। অবসরের পর পেনশন গ্রাচুইটির টাকাসহ পরিবারের স্ত্রী-পুত্রের গচ্ছিত টাকাসহ সব মিলিয়ে ৯০ লাখ টাকা জমা করেন রেইনবো কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে। এই টাকা তাঁর পরিবারের সমস্ত সঞ্চয়ের টাকা। তিনি বলেন, “সোসাইটির চেয়ারম্যান পিন্টু আমার ছাত্র। সে আমার টাকা আত্মসাৎ করবে, আমি তা কখনো কল্পনাও করিনি। আমি এখন একেবারে নিঃস্ব।”
বিনিয়োগকারীরা জানান, ৫ সহস্রাধিক বিনিয়োগকারী প্রায় ২শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন রেইনবো কো-অপারেটিভ ও এর সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানে সেই সমপরিমাণ বা তার দশ ভাগের একভাগ অর্থও এখন আর গচ্ছিত নেই। তারা অভিযোগ করেন, পরিচালকরা বিভিন্ন কেনাকাটায় দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আমানত ব্যক্তিগতভাবে লুট করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, চেয়ারম্যান পিন্টুসহ অন্য পরিচালকরা হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ হতে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা গ্রহণ করে রাজকীয় ভাবে জীবন যাপন করছেন। অথচ গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করে নানা টালবাহানার মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ করছেন।
এ বিষয়ে পিন্টুর ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Leave a Reply