রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: ঘুষের বাড়তি টাকা না দেয়ায় নামজারি আবেদন শুনানী ছাড়াই বাতিল করার অভিযোগ উঠেছে রায়গঞ্জের ধামাইনগর ইউনিয়ন ভূমি-সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, রায়গঞ্জ উপজেলার শিবপুর মহিষাচাপড় গ্রামের বিমল চন্দ্র মাহাতো ও তার চাচা মতিলাল চন্দ্র মাহতো ওয়ারিশসূত্রে উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের উত্তর ফরিদপুর মৌজার আরএস ৩৩ নম্বর খতিয়ানের .২১৬ অংশের মালিক।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মতিলাল মাহতো ও বিমল চন্দ্র মাহাতো তাদের অংশের সম্পত্তির নামজারি করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাধন কুমার বসাক এর সাথে কাগজপত্র নিয়ে দেখা করেন। এসময় তিনি নামজারি বাবদ ২০ হাজার টাকা ও আবেদন করা বাবদ অফিস সহকারীকে আরো ২ হাজার টাকা দিতে বলেন। টাকা ছাড়া নামজারি হবে না মর্মে জানান।
ভয় পেয়ে বিমল চন্দ্র মাহাতো স্থানীয় ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম, আসমত আলী ও ফজলুর রহমানকে সাথে নিয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাধন কুমার বসাক এর নিকট গিয়ে ২২ হাজার টাকা দেন। টাকা হাতে নিয়ে তিনি বিমল চন্দ্রকে সপ্তাহখানেক পরে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর প্রায় চার মাস অতিবাহিত হলেও সাধন কুমার নামজারির কোনো আবেদন দাখিল না করে বিমল ও মতিলাল মাহাতোকে ঘুরাতে থাকেন।
দীর্ঘ চার মাস পর বিমল ও মতিলাল চন্দ্র উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তাদের নামে কোনো নামজারির আবেদনই দাখিল করা হয়নি। এরপর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাধন কুমার বসাক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমান এসিল্যান্ড খুব শিগগির বদলী হবেন। নতুন এসিল্যান্ড এলে তারপর তার কাজ করে দিবেন। এদিকে জমির ক্রেতারা চাপাচাপি শুরু করলে গত ২৬ মে একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে অনলাইনে মতিলাল মাহাতো ও বিমল চন্দ্র মাহাতো তাদের অংশের সম্পত্তির নামজারির আবেদন দাখিল করেন। পরদিন নামজারির আবেদনটি উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
অনলাইনে নিজেরাই আবেদন করায় ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়ার অপরাধে বিমল ও মতিলাল চন্দ্রের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন নায়েব সাধন কুমার। এক পর্যায়ে তিনি নামজারি বাবদ আরো ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন। বিমল চন্দ্র নতুনকরে আর কোনো টাকা দিতে পারবেন না মর্মে জানালে কোনো ধরনের নোটিশ জারি ও শুনানী ছাড়াই আবেদনপত্রটি বাতিলের সুপারিশ করে তা উপজেলা ভূমি অফিসে ফেরত পাঠান। পরদিন সোমবার উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারি আবেদনের উপর শুনানীর জন্য বিমল চন্দ্র ও মতিলাল মাহাতোকে কাগজপত্রসহ সকাল ১০টায় হাজির হতে বলা হয়। তারা ঐদিন সকালে উপজেলা ভূমি অফিসে হাজির হলে জানতে পারেন, আগের দিন রাতেই তাদের নামজারির আবেদনটি কোনরকম শুনানী ছাড়াই বাতিল করা হয়েছে।
চাহিদামতো ঘুষের টাকা দিতে না পারায় নামজারি আবেদন বাতিল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা কৃষক সমিতি ও উপজেলা আদিবাসী সমিতির নেতৃবৃন্দ। ক্ষুব্ধ কৃষক বিমল চন্দ্র জানান, তহশীলদার আমার কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তিনি বলেন, এই সম্পত্তি ওয়ারিশসূত্রেপ্রাপ্ত আমার বৈধ সম্পত্তি। আমি আমার নামজারি চাই। দুর্নীতিবাজ নায়েব এর ঘুষের বিচার চাই। ঘুষ ছাড়া এই অফিসে কোনো কাজ হয়না। তিনি বলেন, আমি ইচ্ছা করে টাকা দেইনি। ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছেন।
ঘুষের বিষয়ে জানতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাধন কুমার বসাককে মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার না করে বরং বিমল চন্দ্রকে তার সাথে দেখা করতে বলেন। ইউপি সদস্য আবু রায়হান বাচ্চু বলেন, নায়েব টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু নামজারি আবেদন বাতিল হওয়ায় তিনি টাকাটি বিমল বাবুকে ফেরত দিতে চেয়েছেন।
উপজেলার সিমলা গ্রামের মনিরুল, উত্তর ফরিদপুর গ্রামের ফজলুর রহমান ও বাঁকাই গ্রামের আসমত আলীর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, জমির খারিজ বাবদ বিমল বাবু নায়েব সাধনকে তাদের সামনেই ২২ হাজার টাকা দিয়েছেন।
Leave a Reply