এফ শাহজাহান: ফ্যাসিনা (ফ্যাসিস্ট হাসিনা ) এই সময় ভারত ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার চিন্তা করছেন না। ভারতও তাকে নিজেদের আশ্রয় থেকে আর হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। তার মানে, হাসিনা এখন থেকে ভারতের পার্মানেন্ট শেল্টারেই থাকবেন এবং ভারতের নির্দেশেই নেক্সট মিশন রান করাবেন।
গণহত্যা ও ফ্যাসিস্টের পক্ষ নেওয়ার প্রথম চাপ সামলানোর জন্য ভারত শুরুতেই ছলনার মুখোশ পরে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিল যে, ফ্যাসিনাকে তারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবে না। তিনি অন্য কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন ; এমন অপপ্রচারও চালানো হয়েছিলো ভারতের পক্ষ থেকে।
এখন দিন যতই যাচ্ছে, ভারতের সেই মুখোশ ততই খুলে পড়ছে। ভারত ফ্যাসিনাকে প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের ২য় স্বাধীনতাকে অস্বীকার করছে এবং ২০ কোটি মানুষের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভারত এখন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, তারা কখনোই বাংলাদেশের মানুষের বন্ধু ছিলো না এবং এখনো তারা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।
বাংলাদেশের মানুষ এখন একেবারে স্পষ্ট বুঝে গেছে যে, ভারত শুধু আওয়ামী লীগেরই ঘনিষ্ট বন্ধু। ভারত হাসিনার বন্ধু। তারাই হাসিনাকে ছোট থেকে লালন-পালন করেছিলো একটি বৃহত্তর স্বার্থে। সেই স্বার্থ হাসিলের জন্য হাসিনাকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে বাংলাদেশ মিশনে পাঠিয়েছিল।
নিজেদের মিশন সাকসেস করার জন্য তারা ওপার থেকে কলকাঠি নেড়ে এপারে একটানা ১৮ বছর ফ্যাসিবাদ কায়েম রেখেছিল। হঠাৎ কালবৈশাখীর মতো আগস্ট বিপ্লবের ফলে তাদের সেই মিশন ব্যর্থ হয়ে গেছে। এখন হাসিনাকে প্রশ্রয় না দিলে ভারতের পরবর্তী মিশন শুরু করা সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশে তাদের দ্বিতীয় কোন বন্ধু নেই। তাই ফ্যাসিবাদীদের কখনোই হাতছাড়া করবে না ভারত।
বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের যে ‘গেইম পলিটিকস’ তাতে একমাত্র তুরুপের তাস হচ্ছেন হাসিনা। তাকে প্রশ্রয় না দিলে ভারত গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশে যে নীল নকশার জাল বিছিয়েছে, তা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।
গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধী হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত স্পস্টত বাংলাদেশকে আরো একটি জরুরী বার্তা দিচ্ছে যে, তারা বাংলাদেশকে নিয়ে চুপচাপ বসে নেই। সময় এবং ঝোপ বুঝে আবারো কোপ বসাবে ভারত ।
ভারতের এই বার্তা বাংলাদেশের জনগণ এবং দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। কারণ বাংলাদেশের জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝেশুনেই কিন্তু ভারত ফ্যাসিনাকে সেখানে আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০ কোটি বাংলাদেশির সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
গত ৫০ পঞ্চাশ বছর ধরে বাংলাদেশের কিছু মানুষের একটা অন্ধবিশ্বাস ছিল যে সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি ভারত আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধু। কিন্ত ফ্যাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে অন্ধবিশ্বাসী মানুষের সেই ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছে ভারত। ভারত জেনে বুঝেই খোলাসা করে দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু নয়, ভারত শুধু আওয়ামী লীগেরই ঘনিষ্ট বন্ধু।
এখন এটা দিবালোকের মতো পরিস্কার হয়ে গেছে যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত কী কারণে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলো। বাংলাদেশ কিংবা দেশের জনগনের পক্ষে ভারত যদি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করতো তাহলে এখন তারা দেশের চিহ্নিত গণশত্রুকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতো না এবং ২য় স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়াতো না।
ভারতের এই স্পষ্ট বার্তা অনুধাবন করতে পারলেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর চেতনা শানিত হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার মৌলিক চেতনাকে লালন করতে হলে ভারতের এখনকার এই বার্তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।
বাংলাদেশের সম্মিলিত দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্য সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় আরো মজবুত করতে হলে এই চেতনাকেই শানিত করতে হবে। আর বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের স্বার্থবিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একটা জাতীয় শক্তি তৈরি করতে এই চেতনার কোন বিকল্প নেই।
সকল গঞ্জনা-বঞ্চনা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা অদম্য তারুণ্যের এই বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার মৌলিক চেতনা প্লাবিত হোক, শানিত হোক এবং দুর্বার গতিতে উর্বর হোক এই প্রত্যাশা দানা বেঁধে উঠুক সবার বুকে।
আগস্ট বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
লেখক: এফ শাহজাহান, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
Leave a Reply