বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ায় সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানী এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেড, ইডিসিএল-এ নতুন করে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মাত্র কয়েকদিনের মাথায় অত্যন্ত গোপনে ৩০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব নিয়োগের জন্য পত্রিকায় কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি।
জানা গেছে, বগুড়া প্ল্যান্টে কর্মরত সিবিএর ২ কেন্দ্রীয় নেতা ও বগুড়ার বিএনপি থেকে বহিস্কৃত এক নেতার ভাইয়ের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বগুড়া প্ল্যান্টের উপ-ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মোঃ ফজলুল হক তার নিজের ছেলেকেও ফার্মাসিস্ট পদে চাকরি নিয়ে দেন। এই পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার। এসব পদে সাধারণত পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার বিধান থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিকদলের নাম ভাঙ্গিয়ে ইডিসিএল-এর বগুড়া প্ল্যান্টে একটি সংঘবদ্ধ গ্রæপ এই নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত আছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে, এ বিষয়ে বগুড়া জেলা শ্রমিকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন শেখ বাঘা বলেন, “গত ১৫-১৬ বছরে এসব শ্রমিক নেতাকে রাজপথে খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিয়োগ-বাণিজ্যের সাথে জড়িত সিবিএর নেতারা বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকদলের কেউ নন।”
বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ২১৩ জন কর্মচারীকে ১/১১ এর সরকারের সময় চাকুরিচ্যুত করা হয়। এসব কর্মচারী চাকরি হারিয়ে এখন প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। চাকুরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনঃবহাল না করে নতুন করে নিয়োগ দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাকুরিচ্যুত কর্মচারীরা।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে ২০ জনের একটি নিয়োগ আদেশ হয়। কিন্তু তাদের যোগদানে বাঁধা দেন এসেনসিয়াল ড্রাগস এর বগুড়া শাখা সিবিএর দুই নেতা। পরে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ঐ দুই নেতা তাদের যোগদানের সুযোগ দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান, “এখানে টাকা ছাড়া কারো নিয়োগ হয় না। এসব নিয়োগে হেড অফিস, বগুড়া প্ল্যান্টের কর্মকর্তা আর সিবিএ’র (কর্মচারী ইউনিয়ন) নেতারা জড়িত।”
এ বিষয়ে স্থানীয় দুই সিবিএ নেতা বেঞ্জির বিল্লাহ ও আবু নছের এর নিকট জানতে চাইলে তারা জানান, নিয়োগ হয় কেন্দ্রীয় অফিস থেকে। আমরা কাজ করি আঞ্চলিক অফিসে। এখানে আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। গত ৫ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৩০ জনকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সিবিএ নেতা আবু নছের এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। বগুড়া প্ল্যান্টে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্তদের অফিসে ঢুকতে না দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তাদের প্রথমে ঢুকতে দেয়া হয়নি, কারণ তাদের গেট পাশ ছিল না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইডিসিএল এর একজন কর্মচারী জানান, “এসেনসিয়াল ড্রাগস এর উপ-ব্যবস্থাপক ফজলুল হক ও বগুড়া অফিসের একজন উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।” তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “জড়িত না থাকলে উপ-ব্যবস্থাপক ফজলুল হকের নিজের ছেলের চাকরি হয় কিভাবে?”
নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপ-ব্যবস্থাপক ফজলুল হক বলেন, আমি প্রোডাকশন বিভাগে চাকরি করি। নিয়োগ বিষয়টি হেড অফিসের প্রশাসন বিভাগ দেখে। নিজের ছেলের চাকরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলের চাকরি হয়েছে ফার্মেসি বিভাগে। এটার বিষয়টি আলাদা। পরীক্ষার মাধ্যমেই তার চাকরি হয়েছে।”
পত্রিকায় কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “না এটা ইন্টারনালভাবেই হয়েছে। ইডিসিএল-এ সাধারণত ইন্টারনালভাবেই নিয়োগ হয়।”
Leave a Reply