ওয়াহেদ ফকির, বগুড়া: সন্তান চুরি হয়ে যাওয়ার ১২ বছর পরও নিজের সন্তানকে পুরোপুরি ফিরে পাননি এক মা। বিচারহীনতা ও হয়রানির অভিযোগ তুলে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার বগুড়ায় এক মানববন্ধন সন্তান হারানো মা মোছা: তাজমিনা আক্তার।
ভুক্তভোগী তাজমিনা আক্তারের অভিযোগ, ২০১২ সালে প্রতারণার মাধ্যমে তাঁর সন্তানকে চুরি করা হয়। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে গেলেও সন্তানের ওপর তাঁর পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর বগুড়া জেলা পরিষদের সামনে থেকে তিনি তাঁর চুরি যাওয়া সন্তানকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। তবে এক সপ্তাহ পর প্রতিপক্ষের চক্রান্তে পুলিশ তাঁকে আটক করে এবং তাঁর সন্তানকে আবারও প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দেয়।
তাজমিনা আক্তার জানান, বগুড়া সদর থানার ওসি মোঃ মইনউদ্দিনের নির্দেশে এসআই মোঃ রাজিব হোসেন ও মোঃ শহিদুল তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। তাঁর অভিযোগ, থানায় তাঁকে আলাদা কক্ষে আটকে রেখে তাঁর বোরকা, হিজাব ও ওড়না খুলে নেওয়া হয় এবং সারা রাত ফ্লোরে থাকতে বাধ্য করা হয়। পরদিন তাঁকে আদালতে পাঠানো হলে কোনো শুনানি ছাড়াই তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, ১৫ দিন কারাগারে থাকার পর ১৩ নভেম্বর বগুড়া জেলা দায়রা জজ আদালতে ডিএনএ রিপোর্ট উপস্থাপন করলে আদালত তাঁকে জামিন দেন এবং তাঁর সন্তানের বিষয়ে ইতিবাচক রায় দেন। তবে মামলার আসামিরা এখনো জামিনে মুক্ত এবং বিভিন্নভাবে তাঁকে ও তাঁর আইনজীবীকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মানববন্ধনে তাজমিনা আক্তার বলেন, তাঁর মামলা থেকে আসামিদের রেহাই পেতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এমনকি আসামিরা তাঁর সন্তানসহ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করছে। তাঁকে মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে প্রাণনাশের শিকার হতে পারেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, যেন তাঁর সন্তান চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা উপযুক্ত শাস্তি পায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের কাছে দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
তাঁর আইনজীবী মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার মক্কেলের ন্যায়বিচার পাওয়া অধিকার আছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের প্রভাব ও হুমকির কারণে মামলার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চাই, এ মামলার যথাযথ তদন্ত ও বিচার হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মা তাঁর সন্তান হারানোর ভয় না পান।”
মানববন্ধনে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সবাই দ্রুত বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
Leave a Reply