অনলাইন জুয়া ও অনৈতিক বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা

সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশনাল কনটেন্ট প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। সরকার মনে করে, এই ধরনের কার্যকলাপ সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর পরিপন্থী। এই অনৈতিক কার্যক্রম তরুণ সমাজের নৈতিক বিকাশ, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রাষ্ট্রীয় নৈতিক কাঠামোর জন্য হুমকি।
দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্মবান্ধব রাখতে সরকার কিছু জরুরি নির্দেশনা প্রদান করেছে:
মিডিয়া ও বিজ্ঞাপন সংস্থার প্রতি নির্দেশনা: বাংলাদেশের সকল পত্রিকা, অনলাইন সংবাদপত্র, নিউজ পোর্টালসহ যেকোনো স্থানীয় এবং আঞ্চলিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংস্থা তাদের ডিফল্ট সাইট/অ্যাপ্লিকেশন, ব্রাউজার ভিত্তিক বিজ্ঞাপনের অংশ বা গুগল অ্যাডসেন্স ও অন্যান্য বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মে কোনোভাবেই পর্নোগ্রাফি, জুয়া বা গ্যাম্বলিং সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। এটি সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন, যার জন্য শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেলিব্রিটি ও ইনফ্লুয়েন্সারদের সতর্কতা: দেশের সকল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যে তারা যেন জুয়া, বেটিং, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক কোনো পণ্য, সেবা বা ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন বা প্রোমোশনাল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া বা প্রচারে সহায়তা করা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
ওয়েবসাইট ও প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণ: বাংলাদেশে পরিচালিত বা বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য দেশি বা বিদেশি যেকোনো প্ল্যাটফর্মে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কোনো কনটেন্ট, অ্যাড বা লিংক প্রচার বা প্রচারে সহায়তা করা যাবে না। জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ) কনটেন্ট মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করবে এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট বা প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ব্লকিং, জরিমানা বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কাস্টমাইজেশন ও জিরো টলারেন্স নীতি: মোবাইল কোম্পানি, আইএসপি, গুগল অ্যাডসেন্স ও মেটা অ্যাডসহ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্থানীয় আইন ও নৈতিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীতি কঠোরভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ওয়েবসাইট, পত্রিকা ও নিউজ পোর্টাল, অ্যাপ ইত্যাদির ডিফল্ট অ্যাডসেন্স সেটিংস পরিবর্তন করে কাস্টমাইজড করতে হবে, যাতে জুয়া, পর্নো, গ্যাম্বলিং এবং এতদসংক্রান্ত গেইমিং বিজ্ঞাপন বা পপ-আপ না আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি মেনে চলবে। আইন ভঙ্গ করলে জনমত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ব্লক করা হবে।
সরকার মনে করে, একটি নৈতিক, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সরকারি সংস্থা, মিডিয়া, প্রযুক্তি কোম্পানি ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। অনলাইনে কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন বা কনটেন্ট দেখতে পান, তবে notify@ncsa.gov.bd ঠিকানায় রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিটিআরসি, এনসিএসএ, এনটিএমসি, এনএসআই এবং বিএফআইইউ এই প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে যৌথভাবে কাজ করছে।