আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.): শান্তি ও আত্মশুদ্ধির বার্তা

ডেস্ক রিপোর্ট:
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবি, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি দিন। প্রায় চৌদ্দশত বছর আগে এই দিনে, ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে আরবের মর্যাদাবান কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মানবতার শ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
তাঁর জন্ম হয় মক্কার সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে, যেখানে নারীর অধিকার ছিল না, শক্তিশালীর হাতে দুর্বলরা নিপীড়িত হতো, মূর্তিপূজা ও অমানবিক প্রথায় মানুষ ডুবে ছিল। তাঁর আগমনের মাধ্যমে জাহেলিয়াতের অমানিশা ভেদ করে পৃথিবীতে নেমে আসে শান্তি, ন্যায় ও আলোর ধারা।
প্রিয় নবী (সা.)-এর জন্মদিন মুসলমানদের কাছে শুধু আনন্দের নয়, বরং এটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ স্মরণ ও আত্মশুদ্ধির দিন। আল্লাহর পাঠানো সর্বশেষ রাসুল হিসেবে তিনি মানবজাতিকে মুক্তির বার্তা দিয়েছিলেন। তাঁর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় ন্যায়, সমতা, করুণা ও ভ্রাতৃত্বের মহিমা।
নবীজির আগমনকে কেন্দ্র করে আজ বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। মসজিদ, মাদরাসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেজেছে আলোয়, আয়োজন করা হয়েছে মিলাদ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত পরিবেশনা এবং দোয়া মাহফিলের। দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ, খতমে কোরআন ও ধর্মীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হচ্ছে প্রিয় নবীর জীবন ও আদর্শ।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদে মিলাদুন্নাবি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে বিশেষ কর্মসূচি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিনব্যাপী আলোচনা, ওয়াজ মাহফিল ও মিলাদ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোরআন খতম, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা এবং প্রবন্ধ পাঠের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাড়িতে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছেন।
তবে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, ঈদে মিলাদুন্নাবির মূল শিক্ষা হলো নবীজির আদর্শকে বাস্তবে ধারণ করা। কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকলে এ দিনের তাৎপর্য পূর্ণতা পাবে না। মহানবী (সা.) ছিলেন দয়া, ক্ষমাশীলতা ও ন্যায়বিচারের প্রতীক। শত্রুর প্রতিও তিনি প্রদর্শন করেছিলেন অনন্য করুণা।
তাঁর জীবনের প্রতিটি দিক মুসলমানদের জন্য দৃষ্টান্ত। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নবীর শিক্ষা অনুসরণ করলেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে শান্তি, সমতা ও মানবিকতা।
আজকের বিশ্ব যখন সহিংসতা, বিভেদ ও অস্থিরতায় জর্জরিত, তখন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তিনি শিখিয়েছেন, আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পথ হলো মানুষের প্রতি দয়া, ন্যায় ও সহমর্মিতা প্রদর্শন। তাই ঈদে মিলাদুন্নাবি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃত ভক্তি কেবল আনুষ্ঠানিকতায় নয়, বরং নবীর আদর্শে জীবন পরিচালনায়।
পবিত্র এ দিনে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে একটাই আহ্বান—প্রিয় নবীর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের সংশোধন করা এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করা। কেননা, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শই পারে পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে।