তিস্তার বুকে স্বপ্নের সেতু উদ্বোধন ২০ আগস্ট

সেলিম সরকার:
গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা সেতু আগামী ২০ আগস্ট উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২ আগস্ট উদ্বোধনের কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে ২৫ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়, আর সর্বশেষ সিদ্ধান্তে ২০ আগস্টই চূড়ান্ত হয়েছে দিনটি।
প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। ৩০টি পিলারের ওপর দাঁড়ানো এই সেতুর মাধ্যমে তিস্তার দুই পাড়ে বসবাসরত হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে নানা প্রশাসনিক জটিলতা ও প্রকল্প সংশোধনের কারণে কাজ শুরু হতে বিলম্ব হয়। অবশেষে ২০২১ সালে মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এবছর জুনে প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সেতু নির্মাণে ২৭৯ কোটি ৪৭ লাখ, সংযোগ সড়কে ১০ কোটি ২৫ লাখ, নদী ব্যবস্থাপনায় ৮ কোটি ৫৫ লাখ এবং জমি অধিগ্রহণে ৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট।
সেতুর দু’পাশে মোট ৫৭ কিলোমিটারের বেশি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, যার মধ্যে চিলমারীর ম্যাটিকাটা থেকে সেতু পর্যন্ত ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধার ধাপেরহাট থেকে হরিপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিস্তার দুই পাড়ে নদী ভাঙন রোধে ৩.১৫ কিলোমিটার নদীতীর সুরক্ষা কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
সেতুটি চালু হলে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামসহ পুরো উত্তরাঞ্চলের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। ঢাকা থেকে এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে দূরত্ব কমে যাবে ১০০ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। জরুরি চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রশাসনিক সেবা গ্রহণেও সুবিধা হবে। একই সঙ্গে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হবে তিস্তা নদীকে ঘিরে।
উদ্বোধনকে ঘিরে দুই জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সেতু ও সংযোগ সড়কের আশপাশে সাজানো হচ্ছে বর্ণিল পতাকা ও আলোকসজ্জা। তিস্তার বুকে গড়ে ওঠা সেতু দুই পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দেবে এমনটাই আশা করছেন স্থানীয়রা।