গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩০ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

গুমের স্থানগুলোকে “আর্ট গ্যালারি” বা “আয়না ঘর” নামে ডাকা হতো। বন্দিদের আলাদা কোডনেম দেওয়া হতো— বিশেষ বন্দিদের ‘মোনালিসা’ নামে সম্বোধন করা হতো। গোপন বন্দিশালাগুলোকে বলা হতো ‘হাসপাতাল’ বা ‘ক্লিনিক’। গুমের শিকারদের ওপর চালানো হতো লোমহর্ষক নির্যাতন— কারও হাত কেটে ফেলা, নখ উপড়ে ফেলা, ইলেকট্রিক শক দেওয়া কিংবা ঘূর্ণায়মান চেয়ারে বসিয়ে নির্যাতন করা হতো।
স্টাফ রিপোর্টার:
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুমের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাসহ মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং আগামী ২২ অক্টোবর আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন। এসব অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে— অভিযোগ আমলে নেয়া হলে তারা আর সরকারি কোনো পদে থাকতে পারবেন না।
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভিন্নমতাবলম্বী রাজনীতিক, লেখক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি)-এ গোপনে বন্দি রেখে নির্যাতন করা হতো।
দুটি পৃথক মামলায় মোট ১০টি অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে— টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় ৫টি এবং জেআইসি সেলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় আরও ৫টি।
তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে বলেন, গুমের স্থানগুলোকে “আর্ট গ্যালারি” বা “আয়না ঘর” নামে ডাকা হতো। বন্দিদের আলাদা কোডনেম দেওয়া হতো— বিশেষ বন্দিদের ‘মোনালিসা’ নামে সম্বোধন করা হতো। গোপন বন্দিশালাগুলোকে বলা হতো ‘হাসপাতাল’ বা ‘ক্লিনিক’।
প্রসিকিউটরের বর্ণনা অনুযায়ী, গুমের শিকারদের ওপর চালানো হতো লোমহর্ষক নির্যাতন— কারও হাত কেটে ফেলা, নখ উপড়ে ফেলা, ইলেকট্রিক শক দেওয়া কিংবা ঘূর্ণায়মান চেয়ারে বসিয়ে নির্যাতন করা হতো।
প্রথম মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনকে এবং দ্বিতীয় মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক র্যাব ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, এবং অন্যান্য র্যাব ও সেনা কর্মকর্তারা।
এদিকে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও স্বজনরা বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ গ্রহণের খবর শুনে ন্যায়বিচারের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আজমী, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান), হুম্মাম কাদের চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক ও মাইকেল চাকমাসহ আরও কয়েকজন গুমভুক্তভোগী ও তাদের পরিবার।
তাদের ভাষায়, “আজকের এই আদেশ দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচারের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”