ওষুধ প্রমোশনে কোম্পানিগুলোর খরচ বছরে শতকোটি টাকা : ডা. সায়েদুর

বিভিন্ন কোম্পানির অডিট রিপোর্টে দেখা গেছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রমোশন খরচ ১০০ কোটিরও বেশি। এর মধ্যে রিপ্রেজেন্টেটিভদের বেতন, পাঁচতারকা হোটেলে সেমিনার আয়োজন, কোটি টাকার গালা নাইট, এমনকি ৪০–৬০ জনকে বিদেশ সফরে পাঠানোর খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র প্রমোশন খাতে প্রতিবছর শতকোটি টাকা ব্যয় করছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) ডা. মো. সায়েদুর রহমান। রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে বণিক বার্তা আয়োজিত বাংলাদেশ হেলথ কনক্লেভ-২০২৫-এ বক্তব্য রাখার সময় তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির অডিট রিপোর্টে দেখা গেছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রমোশন খরচ ১০০ কোটিরও বেশি। এর মধ্যে রিপ্রেজেন্টেটিভদের বেতন, পাঁচতারকা হোটেলে সেমিনার আয়োজন, কোটি টাকার গালা নাইট, এমনকি ৪০–৬০ জনকে বিদেশ সফরে পাঠানোর খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের দাবি করেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোকে চিকিৎসকদের জন্য প্রায় ২০ শতাংশ ব্যয় করতে হয়, যা সরাসরি স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রভাব ফেলে। তবে উপস্থিত একজন চিকিৎসক তার বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, “আমরা কমিশন নেই না, হয়তো আপনি নেন।” এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ডা. সায়েদুর রহমান মঞ্চ ছাড়তে উদ্যত হন, পরে আয়োজকদের অনুরোধে ফিরে আসেন।
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ নিয়ে নীতিগত প্রস্তাব উত্থাপন করে ডা. সায়েদুর রহমান জানান, দেশে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ধরনের ওষুধ রয়েছে। কিন্তু মাত্র ৩০০ ধরনের ওষুধ দিয়েই ৮৫ শতাংশ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। এসব ওষুধ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার এই বাজারে সরকার দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করে; বাকিটা আসে প্রাইভেট সেক্টর থেকে। ভবিষ্যতে এসব ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য খাতে প্রাইভেট সেক্টরের ভূমিকা নিয়েও মতবিরোধ দেখা দেয় কনক্লেভে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রাইভেট হাসপাতাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতকে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর মনে করেন, বাজেট সংকট প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত করছে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ প্রশ্ন তোলেন, “নগরভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা কেন স্থানীয় সরকারের অধীনে থাকবে? বিশ্বের কোথায় এমন উদাহরণ আছে?”
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, “দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে হবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাদের মানুষ বিদেশ যায়, অথচ উল্টো হওয়া উচিত ছিল—বিদেশিরা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসবে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, বিএসএমএমইউ’র ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক ও সাবেক উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস, ল্যাবএইডের এমডি ডা. এ এম শামীম এবং ন্যাশনাল টেলিহেলথ সার্ভিসের সিইও ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ।