পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করেছে এক ক্ষুদ্র গ্রহাণু — নাম ‘২০২৫ টিএফ (2025 TF)’। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪২৮ কিলোমিটার (২৬৫ মাইল) দূরত্বে চলে গিয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (ISS) উচ্চতার প্রায় সমান। ঘটনাটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি না করলেও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
নাসা-অর্থায়িত ক্যাটালিনা স্কাই সার্ভে (Catalina Sky Survey) প্রথম শনাক্ত করে এই গ্রহাণুটিকে—সেটিও এর নিকটতম অতিক্রমের কয়েক ঘণ্টা পর। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এত ছোট একটি মহাজাগতিক বস্তু মহাকাশে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন কাজ, কারণ এর ব্যাস ছিল মাত্র ১ থেকে ৩ মিটার (৩–১০ ফুট)।
এরপর ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA)–এর Planetary Defence Office এবং অস্ট্রেলিয়ার Las Cumbres Observatory যৌথভাবে কাজ করে গ্রহাণুটির সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ নির্ধারণে সফল হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সহযোগিতা বৈশ্বিক গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার সাফল্যের এক নিদর্শন।
গ্রহাণু ২০২৫ টিএফ পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুর (অ্যান্টার্কটিকা) ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এটি আবার পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে ২০৮৭ সালের এপ্রিল মাসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ক্ষুদ্র বস্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে সাধারণত উজ্জ্বল ‘ফায়ারবল’ (fireball) তৈরি করে এবং ছোট উল্কাপিণ্ডে ভেঙে যায়—তবে বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ভাষায়, এই অতিক্রমের সবচেয়ে বড় গুরুত্ব হলো—পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করা এত ক্ষুদ্র একটি মহাজাগতিক বস্তুকে শনাক্ত করতে পারা। এটি প্রমাণ করে যে, পৃথিবীর আশপাশের নিকট–পৃথিবী বস্তু (NEO) পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি এখন আরও উন্নত ও কার্যকর হচ্ছে।
এক বিজ্ঞানী বলেন, “এ ধরনের ছোট গ্রহাণু ট্র্যাক করা আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ায় এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্ত করতে সহায়তা করে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রহাণু ‘২০২৫ টিএফ’ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ঘনিষ্ঠভাবে অতিক্রম করা বস্তুর একটি হলেও এটি কোনো বিপদের কারণ নয়। বরং এটি মহাকাশবিজ্ঞানের অগ্রগতির নিদর্শন—যেখানে বিজ্ঞানীরা ক্রমশ আরও নির্ভুলভাবে মহাজাগতিক বস্তুর গতিপথ নির্ধারণে সক্ষম হচ্ছেন।