অ্যাঙ্গলার ফিশের অদ্ভুত প্রেম: মিলনে বিলীন হয় পুরুষের অস্তিত্ব

বাংলার ২৪ ঘণ্টা রিপোর্ট:
সমুদ্রের অতল গভীরে, যেখানে আলোর কোনো ছিটেফোঁটাও নেই, সেখানে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির এক রহস্যময় প্রাণি -অ্যাঙ্গলার ফিশ। ‘অ্যাঙ্গলার’ বলা হয় তাদের শিকার ধরার জন্য মাথার দিকে ব্যবহার করা আলোকিত অঙ্গের কারণে। দেখতে যেমন অদ্ভুত তেমনি এর জনন প্রক্রিয়াও বিস্ময়কর। এই গভীর সমুদ্রের মাছগুলো, মিলনের সময় একটি অভাবনীয় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায়।
অ্যাঙ্গলার ফিশের লিঙ্গভেদ অত্যন্ত অদ্ভুত। স্ত্রী অ্যাঙ্গলার ফিশগুলো বিশালাকার, দাঁতালো মুখ এবং আলোকিত অঙ্গ নিয়ে সমুদ্রের অন্ধকারে শিকার করে। অন্যদিকে, পুরুষ অ্যাঙ্গলার ফিশগুলো অনেক ছোট, প্রায় অক্ষম এবং তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো একটি স্ত্রী অ্যাঙ্গলার ফিশ খুজে নেয়া।
এই বিশাল সমুদ্রে সঙ্গী খুঁজে পাওয়া যেন একটি অসম্ভব কাজ, কারণ অন্ধকার এবং দূরত্বের কারণে মিলনের সুযোগ খুব কম। কিন্তু প্রকৃতি এখানে একটি অসাধারণ কৌশল তৈরি করেছে, যৌন পরজীবিতা বা সেক্সুয়াল প্যারাসিটিজম। যখন একটি পুরুষ স্ত্রীকে খুঁজে পায়, তখন সে তার শরীরে দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে এবং একটি এনজাইম নিঃসরণ করে যা উভয়ের ত্বককে গলিয়ে মিশিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে, পুরুষের শরীর স্ত্রীর সাথে একীভূত হয়ে যায়।
তাদের রক্তপ্রবাহ মিলিত হয়, এবং পুরুষের নিজস্ব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন চোখ, পাখনা ইত্যাদি বিলীন হয়ে যায় , শুধুমাত্র শুক্রাশয় টিকে থাকে। এইভাবে, তারা গলে মিশে যায় এবং আজীবন এভাবেই থাকে।
এই প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র এক জোড়া মাছের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একটি স্ত্রী অ্যাঙ্গলার ফিশ একাধিক পুরুষকে তার শরীরে মিলিয়ে নিতে পারে, যা তাকে যেকোনো সময় ডিম ফুটাতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা এই আচরণকে ‘পরজীবী মিলন’ বলে অভিহিত করেন, যা গভীর সমুদ্রের চরম পরিবেশে বেঁচে থাকার একটি অভিযোজিত কৌশল।
এটি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সামুদ্রিক প্রাণিদের জীবন কত বৈচিত্র্যময় এবং কখনো কখনো ভয়ঙ্কর। গভীর সমুদ্রের এই রহস্য উন্মোচন করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছেন যে জীবনের বেঁচে থাকার লড়াই কতটা অদ্ভুত রূপ নিতে পারে।