লুটপাটের শিকার ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও কমিশন বাণিজ্যের ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ২০টি দুর্বল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রাতিষ্ঠানিক এফডিআর আটকে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সংকটে থাকা ৯টি প্রতিষ্ঠান বন্ধের তালিকায় রয়েছে।
দীর্ঘদিনের অনিয়ম, ঋণখেলাপি ও গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে অক্ষমতার কারণে ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও কমিশন বাণিজ্যের ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র মতে, এ সিদ্ধান্ত মূলত তিনটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে—আমানত ফেরত দিতে অক্ষমতা, উচ্চ খেলাপি ঋণ এবং মূলধন ঘাটতি। এসব প্রতিষ্ঠানের অবসায়নের ফলে সরকারের প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে ২০টি দুর্বল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রাতিষ্ঠানিক এফডিআর আটকে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সংকটে থাকা ৯টি প্রতিষ্ঠান বন্ধের তালিকায় রয়েছে।
বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এফএএস ফাইন্যান্সের মোট ঋণের ১৮১৪ কোটি টাকা বা ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ খেলাপি। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান ১৭১৯ কোটি টাকা। ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৮ শতাংশ ঋণখেলাপি। এছাড়া লোকসান ১০১৭ কোটি টাকা। বিআইএফসির ৯৭ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণখেলাপি এবং লোকসান ১৪৮০ কোটি টাকা। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৩৯৭৫ কোটি টাকা ঋণের ৯৬ শতাংশ খেলাপি। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান ৪২১৯ কোটি টাকা। পিপলস লিজিংয়ের ৯৫ শতাংশ খেলাপি, লোকসান ৪৬২৮ কোটি টাকা। আভিভা ফাইন্যান্সের ২৪৩০ কোটি টাকা বা ৮৩ শতাংশ খেলাপি। লোকসান ৩৮০৩ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৯৮৪ কোটি টাকা বা ৭৫ শতাংশ খেলাপি, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা। জিএসপি ফাইন্যান্সের ৫১৫ কোটি টাকা বা ৫৯ শতাংশ খেলাপি, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা। এছাড়া প্রাইম ফাইন্যান্সের ৫৩৪ কোটি টাকা বা ৭৮ শতাংশ ঋণখেলাপি। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।
এদিকে দুর্বল পাঁচটি ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম, সোস্যাল ইসলামী ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক—এর কাছেই বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের ৩৭ হাজার কোটি টাকার এফডিআর আটকে আছে।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি শফিকুর রহমান বলেন, “রাজনৈতিক প্রভাব, কমিশন বাণিজ্য ও উচ্চ সুদের প্রলোভনে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে আমানত রাখা হতো। তৎকালীন ক্ষমতাবানদের প্রভাব ছিল প্রকট। বিশেষ করে ফারমার্স ব্যাংক ও এস আলম গ্রুপের প্রভাবের কথাও সবার জানা।”
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের পতনের মূল কারণ দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “নীতিমালার অভাব নয়, দুর্নীতিই মূল সমস্যা। দুর্নীতি বন্ধ না হলে এমন পরিস্থিতি বারবার ঘটবে।”
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই এফডিআর বিনিয়োগে সুস্পষ্ট নীতিমালা ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চালু না করলে আর্থিক খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।