রডের বাজারে স্বস্তির আভাস

বাংলাদেশে নির্মাণ খাতের ৭০ শতাংশেরও বেশি চাহিদা পূরণ করে ইস্পাত ও রড শিল্প। অবকাঠামো নির্মাণ, রিয়েল এস্টেট, সেতু ও শিল্পপ্রকল্পে রডের চাহিদা বছর বছর বাড়ছে। ফলে কাঁচামালের আন্তর্জাতিক বাজারে যে কোনো পরিবর্তন সরাসরি প্রভাব ফেলে দেশীয় বাজারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈশ্বিক দামে বর্তমান পতন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশেও রডের বাজারে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করেছে আকরিক লোহার দাম। ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাজারে শিঘ্রই কমতে পারে রডের দাম।
চীনের ডালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (ডিসিই) জানুয়ারিতে সরবরাহের চুক্তিতে গত ১৯ আগস্ট দাম কমেছে ০.৮৪ শতাংশ। টনপ্রতি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৬৯.৫ ইউয়ান বা ১০৭.১৪ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশে নির্মাণ খাতের ৭০ শতাংশেরও বেশি চাহিদা পূরণ করে ইস্পাত ও রড শিল্প। অবকাঠামো নির্মাণ, রিয়েল এস্টেট, সেতু ও শিল্পপ্রকল্পে রডের চাহিদা বছর বছর বাড়ছে। ফলে কাঁচামালের আন্তর্জাতিক বাজারে যে কোনো পরিবর্তন সরাসরি প্রভাব ফেলে দেশীয় বাজারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈশ্বিক দামে বর্তমান পতন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশেও রডের বাজারে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে।
চীনের উত্তরাঞ্চলে সেপ্টেম্বরে সামরিক কুচকাওয়াজ উপলক্ষে ইস্পাত কারখানায় উৎপাদন সীমিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে টাংশান অঞ্চলের কয়েকটি মিলকে বাতাসের মান উন্নত রাখার স্বার্থে উৎপাদন কমানোর মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ফলে ধাতব পণ্য তৈরির অন্যতম কাঁচামাল আকরিক লোহার ব্যবহার সেখানে কমে আসছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইস্পাতের চাহিদাও দুর্বল হওয়ার আভাস মিলছে। এরই প্রভাবে বৈশ্বিক বাজারে দাম কমার ধারা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে রডের দাম কমার খবরটি নির্মাণখাত সংশ্লিষ্টদের জন্য অনেকটা আশাব্যঞ্জক খবর। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন ফেরাস স্ক্র্যাপ এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আকরিক লোহা আমদানি হয়, যা দেশের ইস্পাত ও রড শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। কাস্টমস–ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ফেরাস স্ক্র্যাপ আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.১৯ মিলিয়ন টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল কাঁচামালের উপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে দেশের বড় বড় স্টিল মিলগুলো।
এদিকে স্থানীয় বাজারে রডের উচ্চমূল্য দীর্ঘদিন ধরেই ভোক্তা ও ঠিকাদারদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিনিময় হার, জাহাজভাড়া ও ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধির কারণে আমদানির খরচও বেড়েছিল। তবে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দামে এই নিম্নগতি অব্যাহত থাকলে মিলমালিকরা দ্রুত এর প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কেবল কাঁচামালের দাম কমলেই রডের দাম দেশে নাটকীয়ভাবে নেমে আসবে না। কারণ শুল্ক, কর, পরিবহন ও শক্তির দাম এখনও উচ্চ পর্যায়ে। তবু আন্তর্জাতিক দামের পতন দেশীয় বাজারে অন্তত স্থিতিশীলতা আনতে পারে।
সব মিলিয়ে আকরিক লোহা ও ফেরাস স্ক্র্যাপের বাজারদর কমতে থাকায় বাংলাদেশের স্টিল শিল্প কিছুটা স্বস্তি পেতে যাচ্ছে। দাম কমার এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সামনের মাসগুলোতে রডের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।