আধুনিক পরিবেশে মুসলিম নারীর কর্মসংস্থান

ইসলাম নারীর কর্মসংস্থানের প্রয়োজন অস্বীকার করেনি। বরং প্রয়োজনে তারা ঘরের বাইরেও কাজ করতে পারে। তবে শর্ত হলো, কাজটি যেন শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন না করে।ইসলামের আলোকে নারীর কাজ হতে হবে নিরাপদ, বৈধ ও স্বভাব-সম্মত। চিকিৎসা, শিক্ষা বা নার্সিংয়ের মতো কাজ নারী-উপযোগী হিসেবে গণ্য হয়েছে। প্রয়োজনে কৃষি, ব্যবসা বা শিল্প-কারখানার কাজও করা যায়, তবে তা যেন পর্দানুযায়ী হয় এবং স্বামী-সন্তানের অধিকারে বিঘ্ন না ঘটায়।
সৃষ্টির শুরু থেকেই নারী ও পুরুষ উভয়ই পরিবার, সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে অবদান রেখে আসছে। ইসলাম এ অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং কখনো অস্বীকার করেনি। বরং কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে যে মানবসভ্যতার উন্নয়নে নারীর ভূমিকা পুরুষের মতোই মূল্যবান।
মহান আল্লাহ বলেন, “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাশীল সে-ই, যে সর্বাধিক পরহেজগার।” (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)।
আল্লাহ নারী ও পুরুষকে ভিন্ন ভিন্ন স্বভাব, দক্ষতা ও দায়িত্ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষকে জীবিকার জন্য বাইরের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আর নারীকে পরিবারের ভেতরের শৃঙ্খলা, সন্তান প্রতিপালন ও প্রশান্ত পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।” (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৩)। রাসুলুল্লাহ ﷺ-ও নারীর এ দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “নারী হচ্ছে পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণকারী, আর তার দায়িত্ব হচ্ছে তার পরিবারের ব্যাপারে জবাবদিহি করা।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৯৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮২৯)।
এ থেকে বোঝা যায়, নারীর ঘরমুখী জীবন শুধু দায়িত্ব নয়, বরং সমাজের ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে নারীর শ্রম মূল্যহীন। বস্তুবাদী সমাজে ঘরের কাজকে অর্থ দিয়ে মাপা না হওয়ায় তা অমূল্য মনে করা হয়।
অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর শ্রম অত্যন্ত মহৎ, কারণ তার ঘরের শ্রম জাতিকে সুস্থ ও নৈতিক প্রজন্ম উপহার দেয়, পরিবারে শান্তি আনে এবং পুরুষের চরিত্র রক্ষায় ভূমিকা রাখে। আল্লাহ বলেন, “যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আমি তাদের শ্রমফল কখনো নষ্ট করি না।” (সুরা কাহফ, আয়াত : ৩০)।
ইসলাম নারীর কর্মসংস্থানের প্রয়োজন অস্বীকার করেনি। বরং প্রয়োজনে তারা ঘরের বাইরেও কাজ করতে পারে। তবে শর্ত হলো, কাজটি যেন শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন না করে। রাসুল ﷺ বলেছেন, “নারী হচ্ছে আবরিত (গোপনীয়) বস্তু। যখন সে বাইরে বের হয়, তখন শয়তান তার দিকে তাকায়।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস : ১১৭৩)।
তাই বাইরে বের হলে পর্দা রক্ষা করা আবশ্যক। অন্যদিকে সফরের ক্ষেত্রেও সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাসুল ﷺ বলেছেন, “কোনো নারী মাহরাম ছাড়া তিন দিনের সফরে যাবে না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৪১)।
ইসলামের আলোকে নারীর কাজ হতে হবে নিরাপদ, বৈধ ও স্বভাব-সম্মত। চিকিৎসা, শিক্ষা বা নার্সিংয়ের মতো কাজ নারী-উপযোগী হিসেবে গণ্য হয়েছে। প্রয়োজনে কৃষি, ব্যবসা বা শিল্প-কারখানার কাজও করা যায়, তবে তা যেন পর্দানুযায়ী হয় এবং স্বামী-সন্তানের অধিকারে বিঘ্ন না ঘটায়।
আধুনিক যুগে মুসলিম নারীদের জন্য এমন অনেক বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা ঘরে বসেই করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইনে ব্যবসা, অনলাইনে পাঠদান বা কর্মশালা পরিচালনা এখন সহজলভ্য। পাশাপাশি হস্ত ও কুটির শিল্প, আর্ট, ক্যালিগ্রাফি কিংবা লেখালেখির মাধ্যমেও নারীরা আয় করতে পারে। এসব ক্ষেত্র শরিয়তের সীমারেখা মান্য করে সহজেই স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুলে দেয়।
সর্বোপরি বলা যায়, ইসলাম নারীকে সমাজ ও সভ্যতার অপরিহার্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নারীর ঘরমুখী জীবনকে গুরুত্ব দিয়েছে, তবে প্রয়োজনে বাইরে কাজ করারও অনুমতি দিয়েছে। শর্ত হলো, তা যেন ইসলামের সীমা লঙ্ঘন না করে। কুরআন ও হাদিস নারীর শ্রম ও অবদানকে মর্যাদা দিয়েছে এবং আধুনিক যুগে তা আরও বাস্তবসম্মতভাবে প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
লেখক: রাশিদুল ইসলাম,বগুড়া-(০১৫৩১-৫৪৭১৮৯)