ডাকসু নির্বাচনে শীর্ষ ৩ পদে ছাত্রশিবিরের ঐতিহাসিক বিজয়

নির্বাচন সামগ্রিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষক দল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, এত সংখ্যক ভোটার সামলানোর যথেষ্ট প্রস্তুতি কর্তৃপক্ষের ছিল না। আমরা ছোট ছোট কিছু অসঙ্গতি বা ব্যবস্থাপনার যে ভুলগুলো, এ বাদে আমরা মনে করিনি যে বড় কোনো ধরনের অসঙ্গতি ছিল এবং নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না, এটা আমাদের কখনো মনে হয়নি।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল। এর আগে অনেকবার অংশ নিলেও সংগঠনটি ঢাবিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ বেশিরভাগ পদে বিজয়ী হয়েছে। হল সংসদেও তারা এগিয়ে। বিভিন্ন হলের ফলাফল ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘোষিত আনুষ্ঠানিক ফলাফলে এসব তথ্য জানানো হয়।
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান। এছাড়া জিএস পদে একই প্যানেলের এস এম ফরহাদ হোসেন এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার পর ঢাবির সিনেট ভবনে ডাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় অন্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়েছেন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়েছেন।
জিএস পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামিম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। এ ছাড়া প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট।
এজিএস পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মুহা. মহিউদ্দীন খান পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুন পেয়েছেন ৯০০ ভোট।
প্রসঙ্গত, এবার ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হয়েছে ১৩টি পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৩৫ জন।
নির্বাচন সামগ্রিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষক দল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, এত সংখ্যক ভোটার সামলানোর যথেষ্ট প্রস্তুতি কর্তৃপক্ষের ছিল না।
তিনি বলেন, ‘ভাগ্য ভালো ৪টা পর্যন্ত তেমন কোনো বড় সমস্যা তৈরি হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আরেক সদস্য অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘আমরা ছোট ছোট কিছু অসঙ্গতি বা ব্যবস্থাপনার যে ভুলগুলো, এ বাদে আমরা মনে করিনি যে বড় কোনো ধরনের অসঙ্গতি ছিল এবং নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না, এটা আমাদের কখনো মনে হয়নি।’
ডাকসুতে এবার মোট ভোটার ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন আর ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার ছিল। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকাল ৪টায়।