অভিযোগ রয়েছে, অতীত সরকার আমলে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়র এবং প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় গুলশান-বনানী এলাকায় একাধিক সিসা বার গজিয়ে উঠেছিল। সরকার পরিবর্তনের পর এসব প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু বন্ধ হয়ে গেলেও এখন পুনরায় সেগুলো খুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও উচ্চপর্যায়ের তদবিরের কারণে অবৈধ সিসা বারের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের কন্যা এবং এশিয়ার প্রথম চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) হিসেবে পরিচিত বুশরা আফরিনকে ঘিরে নতুন এক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে তার স্বামীর মালিকানাধীন বলে অভিযোগ ওঠা ‘দ্য কোর্ট ইয়ার্ড বাজার’ নামের একটি সিসা লাউঞ্জে মাদকবিরোধী অভিযান চালানোর পর থেকেই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
১৯ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে। গুলশান থানা পুলিশ ওই সিসা লাউঞ্জে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সিসা, একাধিক হুক্কা-বার সেটআপ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাদকদ্রব্য এবং নগদ অর্থ জব্দ করে। অভিযানে পাঁচজনকে আটক করা হয়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, জায়গাটি মূলত ক্যাটারিং ব্যবসার জন্য ভাড়া নেওয়া হলেও পরবর্তীতে অনুমোদন ছাড়া রেস্টুরেন্ট ও সিসা বার হিসেবে চালানো হচ্ছিল।
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, অভিযানে লাউঞ্জের মালিককে পাওয়া যায়নি, তবে পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় লাউঞ্জের মালিক বুশরার স্বামী শরিফ আল জাওয়াদ, পরিচালক আফরোজা বিনতে এনায়েতসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বুশরা আফরিন বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে এই ঘটনার বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অভিযানের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারি পদে থেকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একজন ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে এমন অভিযোগের সম্পর্ক কতটা নৈতিক।
অভিযানের পর জানা গেছে, শুধু এই লাউঞ্জ নয়, গুলশান-বনানীর অভিজাত এলাকায় আরও কয়েকটি সিসা বার পুনরায় চালু করার তদবির চলছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল ও কিছু ব্যবসায়ী নাম ভাঙিয়ে এসব তদবিরে সক্রিয় রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিসা বারের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখন ক্ষমতার পালাবদলের পর নতুন করে দখল-বাণিজ্য শুরু হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, অতীত সরকার আমলে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়র এবং প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় গুলশান-বনানী এলাকায় একাধিক সিসা বারগজিয়ে উঠেছিল। সরকার পরিবর্তনের পর এসব প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু বন্ধ হয়ে গেলেও এখন পুনরায় সেগুলো খুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও উচ্চপর্যায়ের তদবিরের কারণে অবৈধ সিসা বারের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বুশরা আফরিন ২০২৩ সালের মে মাসে ডিএনসিসির চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। নগরীর তাপমাত্রা ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে তার দায়িত্ব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে তিনি আর নিয়মিতভাবে অফিসে উপস্থিত হননি বলে ডিএনসিসির সূত্র জানিয়েছে। এখন তার পরিবারের সঙ্গে সিসা বারের মতো অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি নানামুখী প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
রাজধানীতে সিসা বারের বিস্তার ও পুনরুত্থান প্রশাসনিক তৎপরতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের সংঘাতকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। নগরবাসীর একাংশ মনে করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ধরনের অবৈধ ব্যবসা সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও স্থায়ীভাবে রোধ করা সম্ভব হবে না।
তদন্ত চলমান থাকায় এখনো কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, সংগৃহীত নথি ও জব্দ করা আলামতের ভিত্তিতে বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করা হবে। তদন্ত শেষ হলে সিসা বারের নেপথ্যে কারা, তাদের প্রভাব কতটা, এবং বুশরা আফরিনের পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা কতটুকু— তা পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।