বরগুনায় আলোচিত তানজিলা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ধর্ষকের মৃৃত্যুদণ্ড

জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় জানায়, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে সে। পরে মুক্তিপণ না পেয়ে আমতলীর জনৈক নূর মোহাম্মাদ খানের বাড়ির সামনে হোগল পাতার বনের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের কথা জানাজানি হওয়ার ভয়ে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর হিজাব দিয়ে হৃদয় গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে।
মহিবউল্লাহ কিরন, বরগুনা:
বরগুনায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাদ্রাসা পড়ুয়া তানজিলা কে ধর্ষণ করে হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুইলাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। এছাড়া হত্যায় সহযোগিতা করায় আরেক আসামিকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে।
বুধবার ২৭ আগস্ট বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা জজ লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন এর পূঁজাখোলা ইসলামপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম খানের ছেলে মো. হৃদয় খান (২০)।তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম (১৯)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিল।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নারী শিশু আদালতের বিশেষ পিপি রনজুয়ারা সিপু।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ১২ বছর বয়সী মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রী তানজিলা সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশের বাড়ির ক্ষেতে শাক তুলে ঘরে রেখে আবার বাহিরে যায়। দুপুর পর্যন্ত বাড়িতে ফিরে না আসায় তার বাবা ও মা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকেন। পরের দিন ৬ই ফেব্রুয়ারি তার বাবা আমতলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
এরপর ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর ভাই ইমরানের ফোনে একটি নম্বর থেকে বার্তা আসে। বার্তায় জানানো হয় যে, ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তার বোনকে ছেড়ে দেবে।
এরপর বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। এ ঘটনায় আমতলী থানা পুলিশ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ আমতলী সদর ইউনিয়নের ইসলামপুর হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী তানজিলার নিখোঁজ এর সন্দেহে আসামি হৃদয়কে গ্রেফতার করে। এরপর আসামি হৃদয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় জানায়, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে সে। পরে মুক্তিপণ না পেয়ে আমতলীর জনৈক নূর মোহাম্মাদ খানের বাড়ির সামনে হোগল পাতার বনের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের কথা জানাজানি হওয়ার ভয়ে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর হিজাব দিয়ে হৃদয় গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে।
এরপর ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি আসামি হৃদয় আমতলীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে হৃদয়ের দেখানো মতে মাদ্রাসা ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে আমতলী থানা পুলিশ।
মামলার বাদী ও ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার ১২ বছরের নাবালিকা মেয়েকে আসামি হৃদয় অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না পেয়ে ধর্ষণের পরে হত্যা করে মরদেহ গোপন করার জন্য হোগল পাতার বনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। বিজ্ঞ আদালতের আজকের রায়ে আমি সন্তুষ্ট আমিই ন্যায়বিচার পেয়েছি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল ওয়াসি মতিন বলেন, বাদি অভিযোগ করেছে তার মেয়েকে অপহরণের পরে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত নেই। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমার মক্কেল উচ্চ আদালতে আপিল করবে।
বাদী পক্ষের উকিল ও রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি রনজুয়ারা সিপু বলেন, ১২ বছরের একটি ছোট মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও হত্যা এবং মরদেহ গোপন করা জঘন্যতম অপরাধ। আজকের আদালতের রায়ের শাস্তির মেসেজটি সবার কাছে পৌঁছালে সমাজে অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে।