আজ বিশ্ব মান দিবস: ভেজাল পণ্যে সয়লাব বাজার

বিএসটিআই জানায়, গত এক বছরে তারা ১ হাজার ১০২টি অভিযান পরিচালনা করেছে। জরিমানা আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বেশি। ঢাকায় পরিচালিত ২২৩টি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয় ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
স্টাফ রিপোর্টার:
আজ ১৪ অক্টোবর পালিত হচ্ছে ৫৬তম ”বিশ্বমান দিবস”। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে মান’। তবে বাস্তবে কাজের কাজ হচ্ছে না বলেই অভিযোগ।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফলমূল, কসমেটিকসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যে ভেজাল এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। এসব পণ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক ও ক্ষতিকর উপাদান, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।অথচ এসব নজরদারি করার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নানা কর্মসূচি নিলেও তা কাগুজে বলেই মনে করছেন অনেকে।
বিএসটিআই জানায়, গত এক বছরে তারা ১ হাজার ১০২টি অভিযান পরিচালনা করেছে। জরিমানা আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বেশি। ঢাকায় পরিচালিত ২২৩টি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয় ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
বিএসটিআইর পরিচালক (সিএম) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি, তবে অসৎ ব্যবসায়ীদের নানা কৌশলের কাছে আমরা অসহায়। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন বিদেশি ভেজাল স্ক্রিন কেয়ার পণ্য, যা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে চলমান নকল ও ভেজাল কসমেটিকস মানুষের ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব পণ্যে অতিরিক্ত হাইড্রোকুইনন ও মার্কারি জাতীয় কেমিক্যাল পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর চকবাজার, মৌলভীবাজার, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরসহ নানা স্থানে এসব ভেজাল পণ্যের কারখানা রয়েছে। সরকারি নজরদারি থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
খাদ্যপণ্যে ভেজাল আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, খাদ্যে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভারী ধাতব পদার্থ। কিডনি, লিভার এমনকি ক্যানসারের মতো জটিল রোগের অন্যতম কারণ এই ভেজাল খাদ্য। কিন্তু দুর্বল আইন প্রয়োগ এবং বিচারহীনতার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বিএসটিআই আইন অনুযায়ী, বাজারজাত করার আগে পণ্যের মান যাচাই করে অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ পণ্যই যাচাই ছাড়াই বাজারে আসছে। বিএসটিআইর সক্ষমতা ও জনবল সংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা।
বিশ্বমান দিবস উপলক্ষে বিএসটিআই সারা দেশে প্রচার, আলোচনা সভা ও সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তাভিত্তিক সংগঠনগুলোর মতে, দিন পালন কিংবা বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে ভেজাল রোধ সম্ভব নয়—প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক, কঠোর নজরদারি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ।