পুরুষ মৌমাছির অদ্ভুত জীবন: “দি ড্রামাটিক সেক্সুয়াল সুইসাইড”

অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যৌন মিলনের সময় পুরুষ মৌমাছির যৌনাঙ্গ ভেঙে যায় এবং তার ফলস্বরূপ সেই পুরুষ মৌমাছিটি মারা যায়। এ কারণেই এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় “দি ড্রামাটিক সেক্সুয়াল সুইসাইড”। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও পুরুষ মৌমাছি রাণী মৌমাছির সাথে যৌন মিলনে মিলিত হয়। যৌনতার জন্য প্রাণ দেয়ার ঘটনা বিশ্বে সম্ভবত পুরুষ মৌমাছির ক্ষেত্রেই ঘটে।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকৃতিতে পুরুষ মৌমাছির জীবন একেবারেই অদ্ভুত। এদের একমাত্র লক্ষ্য হলো রাণী মৌমাছির সঙ্গে মিলন করা। মিলন মৌসুমে পুরুষ মৌমাছিরা এক স্থানে ভিড় জমায়, যা “পুরুষ ধর্মসভা” নামে পরিচিত। ঠিক একই সময়ে রাণী মৌমাছি ঘুরতে বের হয়, যাকে বলা হয় “দি মিটিং ফ্লাইট”। রাণী হঠাৎ ধর্মসভায় প্রবেশ করে বিশেষ ধরণের গন্ধ ছড়িয়ে দেয়। এর প্রভাবে শত শত পুরুষ মৌমাছি উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং রাণী পছন্দমত একটি পুরুষের সঙ্গে মিলন করে। এক রাণী পর্যায়ক্রমে ১৮–২০টি পুরুষ মৌমাছির সঙ্গে মিলিত হতে পারে।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যৌন মিলনের সময় পুরুষ মৌমাছির যৌনাঙ্গ ভেঙে যায় এবং তার ফলস্বরূপ সেই পুরুষ মৌমাছিটি মারা যায়। এ কারণেই এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় “দি ড্রামাটিক সেক্সুয়াল সুইসাইড”। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও পুরুষ মৌমাছি রাণী মৌমাছির সাথে যৌন মিলনে মিলিত হয়। যৌনতার জন্য প্রাণ দেয়ার ঘটনা বিশ্বে সম্ভবত পুরুষ মৌমাছির ক্ষেত্রেই ঘটে।
মৌচাকের জীবনযাত্রা রাণীকে কেন্দ্র করেই গঠিত। কর্মী মৌমাছি কঠোর পরিশ্রমী; এক কেজি মধু সংগ্রহ করতে প্রায় ১১০০ মৌমাছিকে প্রায় ৯০ হাজার মাইল পথ ঘুরতে হয়, যা চাঁদের কক্ষপথের প্রায় তিনগুণ। সেই মধু তৈরি করতে প্রায় ৪০ লক্ষ ফুলের পরাগরেণু স্পর্শ করতে হয়। ভালো মৌসুমে একটি মৌচাকে প্রায় ৫৫ কেজি মধু জমা হয়।
অপরদিকে, রাণী মৌমাছি শুধু খায় ও ডিম পাড়ে। প্রতিদিন সে ১৫০০–২৫০০ ডিম দেয়। কোনো ডিম থেকে যদি নতুন স্ত্রী মৌমাছি জন্মায়, কর্মী মৌমাছিরা তাকে লুকিয়ে রাখে যাতে রাণীর নজরে না আসে। রাণীর নজরে পড়লে শিশুর মৃত্যু ঘটে। বড় হলে দুই রাণীর মধ্যে যুদ্ধে সম্ভাবনা থাকে, যা কেবল একজনকে বাঁচিয়ে মৌচাকের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে অথবা দুটি আলাদা মৌচাকের সৃষ্টি করে।
যদি কোনো রাণী মারা যায়, ১৫ মিনিটের মধ্যে সমস্ত কর্মী মৌমাছি তা জানতে পারে এবং সম্মিলিতভাবে নতুন রাণী তৈরি করার উদ্যোগ নেয়। শিল্পী বা কর্মী মৌমাছি জীবনে মাত্র আধা চা চামচ মধু তৈরি করতে পারে। অথচ ৫০০ গ্রাম মধু তৈরিতে প্রায় ২০ লক্ষ ফুলের পরাগরেণু লাগে। প্রকৃতির বিস্ময় এটাই—পৃথিবীতে মধুই একমাত্র খাদ্য, যা কখনো পঁচে না।
মৌমাছির এই মিলন ও পরিশ্রমী জীবনধারা প্রকৃতিকে কতটা রহস্যময় ও চমকপ্রদ করে তুলেছে, তা আমাদের জন্য এক অবাক করা বিস্ময়।