ইসলামী ব্যাংকে এস আলমপন্থি ২০০ কর্মকর্তা বরখাস্ত, ওএসডি ৪৯৭১

২০১৬ সালের শেষ নাগাদ ইসলামী ব্যাংকে মোট জনবল ছিল ১৩ হাজার ৫৬৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৭৭৬ জন। বর্তমানে ব্যাংকের কর্মী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ হাজারে, যার মধ্যে প্রায় ১১ হাজারই এস আলমের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত। এদের একটি বড় অংশই এস আলমের নিজ উপজেলা চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে। এই কারণে এক সময় ব্যাংকটি ‘পটিয়া ব্যাংক’ নামেও কটাক্ষের শিকার হয়।
ডেস্ক রিপোর্ট:
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে এস আলম গ্রুপের প্রভাবিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ব্যাংকটি দখলে নেওয়ার পর এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম চৌধুরীর (এস আলম) পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয় ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে। এসব নিয়োগে ব্যবহার করা হয় ভুয়া সনদ, বক্সের বায়োডাটা এবং অনেক ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি দেওয়া হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকে এস আলমের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কমে যায়। এরপর থেকে তার আমলে নিয়োগ পাওয়া ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তার যোগ্যতা যাচাইয়ে উদ্যোগ নেয় ইসলামী ব্যাংক। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) মাধ্যমে একটি বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষায় অংশ নেয় মাত্র ৪১৪ জন কর্মকর্তা। বাকিদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আর ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মকর্তাকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) করা হয়েছে।
২০১৬ সালের শেষ নাগাদ ইসলামী ব্যাংকে মোট জনবল ছিল ১৩ হাজার ৫৬৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৭৭৬ জন। বর্তমানে ব্যাংকের কর্মী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ হাজারে, যার মধ্যে প্রায় ১১ হাজারই এস আলমের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত। এদের একটি বড় অংশই এস আলমের নিজ উপজেলা চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে। এই কারণে এক সময় ব্যাংকটি ‘পটিয়া ব্যাংক’ নামেও কটাক্ষের শিকার হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এসব নিয়োগের পেছনে এস আলম গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সহযোগীরা প্রতিটি নিয়োগের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও জাল সনদে চাকরি দেওয়া হয়। বিশেষ করে বিজিসি ট্রাস্ট, পোর্ট সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহার করে প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ পান।
ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) কামাল উদ্দিন জসিম জানান, “যেসব কর্মকর্তা পরীক্ষায় অংশ নেননি তাদের ওএসডি করা হয়েছে। আর শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে প্রায় ২০০ জনকে বরখাস্ত করা হয়। টার্মিনেশনের ক্ষেত্রে কোনো কারণ দেখানোর বাধ্যবাধকতা নেই, তবে ব্যাংক মানবিক দিক বিবেচনা করছে।”
অন্যদিকে, বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন। এ বিষয়ে হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার বৈধতা নিশ্চিত করে। ফলে পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরিতে রাখা বা বাদ দেওয়ার বিষয়টি ইসলামী ব্যাংকের এখতিয়ারেই রয়ে গেছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যোগ্যতা যাচাইয়ের এ উদ্যোগে কোনো আইনের ব্যত্যয় বা আদালত অবমাননা হয়নি। বরং ব্যাংকের স্বচ্ছতা, গ্রাহকসেবা ও পেশাদারিত্ব রক্ষার স্বার্থেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।