পিলখানা থেকে রেললাইন-ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা: চিফ প্রসিকিউটর

একজন ঘাতক কাছ থেকে মাথায় গুলি করতেন, নিহতদের মগজ ও রক্ত ফিনকি দিয়ে ছিটকে পড়ত ঘাতকের গায়ে, এবং সে রক্তের গরমে এক ধরণের বিকৃত অনুভূতি পেত। বহু মানুষকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে, পেট কেটে, সিমেন্টের বস্তা বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। আবার অনেককে হাত-পা বেঁধে রেললাইনে রেখে দেওয়া হতো, যাতে পরে সেটিকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে দেখানো যায়।
ডেস্ক রিপোর্ট:
জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-আন্দোলন দমনকে কেন্দ্র করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। রোববার (১২ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এ শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার দেশপ্রেমিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে নির্দেশদাতা ছিলেন স্বয়ং শেখ হাসিনা। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম, খুন, নির্যাতন এবং ভয়ভীতির শাসন ছিল নিত্যদিনের চিত্র। বিরোধী মতের মানুষদের নির্মূল করতে একটি ভয়াবহ পরিকল্পিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল।
তিনি বর্ণনা দেন, কিভাবে একজন ঘাতক কাছ থেকে মাথায় গুলি করতেন, নিহতদের মগজ ও রক্ত ফিনকি দিয়ে ছিটকে পড়ত ঘাতকের গায়ে, এবং সে রক্তের গরমে এক ধরণের বিকৃত অনুভূতি পেত। বহু মানুষকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে, পেট কেটে, সিমেন্টের বস্তা বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। আবার অনেককে হাত-পা বেঁধে রেললাইনে রেখে দেওয়া হতো, যাতে পরে সেটিকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে দেখানো যায়।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ যে ফ্যাসিবাদী একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছিল, তার ফলেই ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তিনি মনে করেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ভিত ধ্বংস করে শুরু হয় এই ভয়ংকর পথচলা। এরপর গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণসহ নানা কৌশলে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর এ সময় আরও বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও ধ্বংস করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা, বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ করে দেয়, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন ছিল গণতন্ত্রবিরোধী এবং ভয়ভীতির উপর নির্ভরশীল।
শুনানির সময় তিনি উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জে র্যাব-১১ এর সদস্যরা একসঙ্গে সাতজনকে খুন করে, লাশ গুম করে। এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লে. কমান্ডার এমএম রানা। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই দেশে গুমের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত বলে মত দেন প্রসিকিউটর।
শুনানির সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা চালানো হয়, যা কিছু সময়ের জন্য পেজটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। পরে সেটি পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় বলে জানান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতিরা শুনানির এক পর্যায়ে মত দেন, বিচারকদেরও জবাবদিহির আওতায় আসা উচিত, যা দেশের বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়টি সামনে আনে।
তাজুল ইসলাম বলেন, জনগণকে নির্যাতন, হত্যা ও ভয়ভীতির রাজত্ব কায়েম করাই ছিল তাদের (আওয়ামী লীগ সরকারের) লক্ষ্য। এই দানবীয় শাসকই একপর্যায়ে ২০২৪ সালে আমাদের তরুণ-তরতাজা প্রজন্মের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়।