বগুড়ায় বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ

বগুড়া প্রতিনিধি:
বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের ন্যাংড়ার বাজার থেকে দরগাহাট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের দেড় শতাধিক গাছ বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। সরকারি নির্দেশে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ অপসারণের নামে গত দুই সপ্তাহ যাবত চলছে এই বৃক্ষ নিধনযজ্ঞ।
বন বিভাগসূত্রে জানা গেছে, সেই অভিযানের আড়ালে যে পরিমাণে গাছ কাটা হয়েছে, তা সরকারি অনুমতির চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেন্ডারের নামে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের পাশাপাশি বনজ মেহগনি, আমলকি ও হরিকতি গাছও নির্বিচারে কেটে বিক্রি করেছেন একটি মহল।
ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক দাবি করেছেন, উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী “পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর” গাছ অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু বন বিভাগের স্পষ্ট বক্তব্য— ইউপি চেয়ারম্যানের এমন কোনো ক্ষমতা নেই। সরকারি রাস্তার পাশের গাছ কাটার আগে বন বিভাগের অনুমতি বাধ্যতামূলক। অনুমতি ছাড়াই গাছ বিক্রি ও কাটার ঘটনা বন ও পরিবেশ আইনের পরিপন্থী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টেন্ডারে ১৩৬টি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ বিক্রি হলেও কাটার সংখ্যা দেড় শতাধিক ছাড়িয়েছে। শ্রমিকরা ১৫ দিন ধরে গাছ কেটে কাঠ বিক্রি করেছেন স্থানীয় বাজারে। পরবর্তীতে বিষয়টি বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াজেদ এর নজরে এলে, তিনি ঘটনাস্থলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ চন্দ্র সরকারকে পাঠান। এরপর ইউএনওর নির্দেশে গাছ কাটা বন্ধ হয়।
বগুড়ার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান জানান, “পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই গাছ প্রচুর পানি শোষণ করে, মাটির আর্দ্রতা কমিয়ে দেয় এবং বিষাক্ত পাতা ঝরিয়ে অন্য গাছ জন্মাতে বাধা দেয়। তবে নিষিদ্ধ ঘোষণা মানেই নির্বিচারে কাটার বন্দোবস্ত নয়। রাস্তার গাছ সরকারি সম্পদ— এগুলো অপসারণে অনুমতি ও তদারকি দুটোই বাধ্যতামূলক।”
অভিযুক্ত ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম শিপন অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তার ভাষায়, “আমি রাজনৈতিকভাবে নির্যাতিত, তাই ব্যবসা করি। টেন্ডারে বৈধভাবে গাছ কিনেছি।” অপর অভিযুক্ত ব্যবসায়ী আরমান আকন্দ স্বীকার করেছেন— “কাটার সময় শ্রমিকরা বুঝতে না পেরে ইউক্যালিপটাসের সাথে কিছু অন্য গাছও কেটেছে।”
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ ভিন্ন। তারা বলেন, গাছ বিক্রির নামে বনজ সম্পদ লুটপাট চলছে। রাস্তা সম্প্রসারণের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউপি চেয়ারম্যান গাছগুলো পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছেন’। গাছগুলোর প্রকৃত মূল্য টেন্ডারমূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।