বিএনপির নেতৃত্বে বড় নির্বাচনি জোট গঠনের তোড়জোড়

বাংলার ২৪ ঘণ্টা রিপোর্ট:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দলগুলোর মধ্যে মেরুকরণ ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি এখন নির্বাচনি জোট, আসন ভাগাভাগি ও কৌশলগত ঐক্য গঠনে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় আলোচনার কেন্দ্রে এখন বিএনপির নেতৃত্বে গঠিতব্য ‘বৃহৎ নির্বাচনি জোট’।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চলমান যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ দল ও জোটকে নিয়ে একটি শক্তিশালী নির্বাচনি জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে এসব রাজনৈতিক মিত্রদের কাছে প্রার্থী তালিকা চাওয়া হয়েছে, এবং কিছু সম্ভাব্য প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ও দেওয়া হয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জোটে আনছে বিএনপি:
বিএনপির লক্ষ্য- উদার গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী, ইসলামি দল ও বামধারার সমমনা দলগুলোর সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য গড়ে একটি বড় মোর্চা তৈরি করা। এই জোটে ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম, লেবার পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে গণমাধ্যম বলেছেন, “বৃহত্তর নির্বাচনি জোট গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা কার কার সঙ্গে আলোচনা করছি, তা সময়মতো জানানো হবে।”
১২ দলীয় জোটের নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের আবুল কালাম আজাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান—সবাই বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন।
গণতন্ত্র মঞ্চ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জোটে যোগ দেয়নি। তবে তারা আসনভিত্তিক সমঝোতায় রাজি আছে বলে জানিয়েছেন জোটের শীর্ষ নেতারা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করছি। তবে শুধু আসন ভাগাভাগি নয়, রাজনৈতিক অবস্থানও মূল্যায়ন করব।”
মাহমুদুর রহমান মান্না ও অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমও জানান, ১২০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে তারা বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এনসিপি ও ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ:
নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত এনসিপিও নির্বাচনি মেরুকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দলটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোটে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ আছে বলে জানা গেছে। এনসিপির রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “বিভিন্ন জোটের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলমান।”
অপরদিকে ইসলামি দলগুলোকেও পাশে টানার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা চলছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু প্রভাবশালী আলেমকে নির্দিষ্ট আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বিএনপি।
সিপিবি, বাসদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সংলাপ:
বাম দলগুলোর সঙ্গেও বিএনপি যোগাযোগ করছে। যদিও সিপিবি আনুষ্ঠানিকভাবে জোটে আসার কথা অস্বীকার করেছে, তবে বিএনপি একাধিকবার সিপিবি ও বাসদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে।
জোটে না থেকেও আলোচনায় এবি পার্টি:
এবি পার্টি এখনো কোনো জোটে নেই। তবে দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জানিয়েছেন, “আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে, তবে এখনো কোনো ফরম্যাট দাঁড়ায়নি। সিদ্ধান্ত নেবে তফসিলের পর।”
গণঅধিকার পরিষদ ও অন্যান্য ছোট দলগুলো তফসিল ঘোষণার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির নেতৃত্বে গঠিতব্য জোটটি একদিকে ইসলামি দল, অন্যদিকে বাম ও উদারপন্থীদের একত্র করার যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তা আগামীর নির্বাচনে নয়া মেরুকরণের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই জোটের অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য, আদর্শিক বৈপরীত্য ও আসন ভাগাভাগির জটিলতা কিভাবে সমাধান হবে?
সব মিলিয়ে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে রাজনৈতিক কৌশল, জোট ও মেরুকরণের খেলা। এখন দেখার বিষয়, এই সমীকরণ শেষ পর্যন্ত কতটা কার্যকর হয় নির্বাচনের মাঠে।