গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইসরায়েল শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু নয়, বেসামরিক জনগণের জীবনের মূল ভিত্তিগুলো—খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও আশ্রয়—ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে।” তদন্তে আরও বলা হয়েছে, গাজার ৭০ শতাংশের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং সেখানে এখন মানবিক বিপর্যয়ের এক ভয়াবহ চিত্র বিরাজ করছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজার অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “মানবতা আজ গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ছে।
প্রায় ৯ লাখ মানুষের শহর ফিলিস্তিনের গাজা সিটিতে নতুন করে ভয়াবহ স্থল আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহের লাগাতার বোমাবর্ষণ, হাসপাতাল ও স্কুলে হামলা, এবং পানি-খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করার পর এবার ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও শত শত সেনা নিয়ে শহরের উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে গাজায় প্রবেশ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শহরের অনেক এলাকায় এখন বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন; আহতদের বহন করার মতো অ্যাম্বুলেন্সও চলাচল করতে পারছে না।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক তদন্ত প্রতিবেদনে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানকে স্পষ্টভাবে “গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া যুদ্ধ” হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইসরায়েল শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু নয়, বেসামরিক জনগণের জীবনের মূল ভিত্তিগুলো—খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও আশ্রয়—ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে।”
তদন্তে আরও বলা হয়েছে, গাজার ৭০ শতাংশের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং সেখানে এখন মানবিক বিপর্যয়ের এক ভয়াবহ চিত্র বিরাজ করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজার অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “মানবতা আজ গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ছে।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়নি। তারা ইসরায়েলের “আত্মরক্ষার অধিকার”-এর কথা পুনর্ব্যক্ত করলেও গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে কেবল উদ্বেগ প্রকাশে সীমিত থেকেছে।
অন্যদিকে, তুরস্ক, ইরান, কাতার ও মালয়েশিয়া ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে “স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ” হিসেবে উল্লেখ করে কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, “গাজায় যা ঘটছে, তা শুধুমাত্র এক যুদ্ধ নয়, বরং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।”
তিনি মুসলিম দেশগুলোকে একত্রে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। মিশর ও জর্ডান সীমান্তে মানবিক করিডর খোলার প্রস্তাব দিলেও ইসরায়েল এখন পর্যন্ত তাতে সম্মতি দেয়নি।
গাজার ভিতরে এ মুহূর্তে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে পানি ও খাবারের ঘাটতি চরম পর্যায়ে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক হাসপাতালে বিদ্যুৎ ও অক্সিজেন না থাকায় আহতরা মৃত্যু বরণ করছে। ফলে গাজার মানুষ এখন এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।