গাজার শাসনব্যবস্থা: রূপান্তরের দ্বারপ্রান্তে এক নতুন অধ্যায়

গাজার ভবিষ্যৎ শাসন তাই একদিকে যেমন অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে, অন্যদিকে তেমনি সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। অনেকেই বলছেন, এটি যদি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে বহু দশকের সংঘাত শেষে গাজা অবশেষে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে ফিরতে পারে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
দীর্ঘ এক বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও ধ্বংসযজ্ঞের পর গাজা এখন নতুন এক শাসনব্যবস্থার মোড়ে দাঁড়িয়ে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি গাজার ভবিষ্যৎ শাসনের পথ খুলে দিয়েছে। তবে কে বা কারা গাজা পরিচালনা করবে— সেই প্রশ্ন এখনো অনিশ্চিত।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক রূপান্তর প্রশাসন (Transitional Authority) গঠনের সম্ভাবনাই সবচেয়ে জোরালো। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মিশর ও কাতার এই প্রশাসনের কাঠামো নিয়ে আলোচনায় রয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম এক বছর গাজা পরিচালনায় আন্তর্জাতিক তদারকি থাকবে, পরে ধীরে ধীরে স্থানীয় নেতৃত্বকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
এই প্রশাসনের দায়িত্ব থাকবে নিরাপত্তা বজায় রাখা, মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা, ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা। হামাসকে সরাসরি শাসন থেকে বাদ দেওয়া হলেও তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক উইং কিছু সীমিত ভূমিকায় থাকতে পারে— এমন সম্ভাবনাও আলোচনায় আছে।
অন্যদিকে, পশ্চিম তটে অবস্থিত প্যালেস্টিনীয় কর্তৃপক্ষ (PA) নিজেদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে চায়। তারা যুক্তি দিচ্ছে, গাজা ও পশ্চিম তট— দুই অঞ্চলই প্যালেস্টিনীয় রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই প্রশাসনের নেতৃত্ব তাদেরই হাতে থাকা উচিত। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এখনো এ প্রস্তাবে পুরোপুরি রাজি নয়; তারা “নিরপেক্ষ প্রশাসন”-এর পক্ষে।
গাজার ভবিষ্যৎ শাসন তাই একদিকে যেমন অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে, অন্যদিকে তেমনি সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। অনেকেই বলছেন, এটি যদি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে বহু দশকের সংঘাত শেষে গাজা অবশেষে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে ফিরতে পারে।
গাজার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা। দীর্ঘ যুদ্ধের পর হামাসসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী কীভাবে নিরস্ত্র হবে, তা নিয়ে রয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, যদি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত গঠন করা না যায়, তবে গাজা আবারও অরাজকতায় ভুগতে পারে।
তবে আশার আলোও রয়েছে। জাতিসংঘ ও আরব লীগ ইতিমধ্যে গাজা পুনর্গঠন তহবিলের ঘোষণা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।