ছেলে সম্পত্তি বুঝে নেওয়ার ১৯ ঘণ্টা পর সম্পন্ন হল পিতার দাফন

গত দুই বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী থাকার সময় প্রায় দুই মাস আগে তিনি তার বসতভিটা ও যাবতীয় সম্পত্তি স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এবং দুই মেয়ে হীরা ও মাহির নামে লিখে দেন।এর ফলে একমাত্র ছেলে মাসুদ রানা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় সম্পত্তি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের জেরে পান ব্যবসায়ী হামেদ আলীর (৫৮) মরদেহ মৃত্যুর ১৯ ঘণ্টা পর দাফন করা হয়েছে। জানা গেছে, হামেদ আলী তার একমাত্র ছেলে মাসুদ রানাকে (৩০) পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছিলেন।
ছেলের ন্যায্য হিস্যা বুঝে নেওয়ার পরই রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ওই ব্যবসায়ীর দাফন সম্পন্ন হয়। ঘটনাটি শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ শালুকগাড়ী গ্রামের। আড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান সোমবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মৃত কেরামত আলীর ছেলে হামেদ আলী দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী থেকে পান কিনে এনে বিভিন্ন হাট-বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করতেন।
গত দুই বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী থাকার সময় প্রায় দুই মাস আগে তিনি তার বসতভিটা ও যাবতীয় সম্পত্তি স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এবং দুই মেয়ে হীরা ও মাহির নামে লিখে দেন।
এর ফলে একমাত্র ছেলে মাসুদ রানা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বাড়িতেই হামেদ আলীর মৃত্যু হয়।
বাবার মৃত্যুর পর ছেলে মাসুদ রানা পৈতৃক সম্পত্তিতে তার ন্যায্য হিস্যা দাবি করেন এবং বলেন, “বাবা অন্যায় করেছেন, আমি আমার অধিকার না পেলে দাফন করতে দেব না।” ছেলের এমন ঘোষণার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, প্যানেল চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামসহ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা মধ্যস্থতার জন্য বৈঠকে বসেন।
দীর্ঘ আলোচনার পর রবিবার দুপুরে হামেদ আলীর স্ত্রী ও দুই মেয়ে শাজাহানপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে মাসুদ রানার নামে তার ন্যায্য অংশের দলিল সম্পাদন করেন। সম্পত্তি বণ্টনের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বিকেল ৩টার দিকে নিজ গ্রামে হামেদ আলীর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।
মৃত হামেদ আলীর বড় বোন হামিদা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ছেলেকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে তার ভাই অন্যায় করেছিলেন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দৃঢ় পদক্ষেপে মাসুদ তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছে।
আড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান জানান, হামেদ আলী দোতলা বাড়ি, ১২ ভিটা ও ৭৩ শতক জমির মালিক ছিলেন এবং তিনি জীবদ্দশায় সব সম্পত্তি স্ত্রী-মেয়েদের নামে লিখে দেন।
আলোচনা ও সালিশের মাধ্যমে মুসলিম ফারায়েজ অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করে অবশেষে দাফন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়ে মৃত হামেদ আলীর ছেলে মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।