কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন কারাগারে

কুড়িগ্রামের বহুল আলোচিত সাংবাদিক নির্যাতন মামলায় নতুন মোড় এসেছে। সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছা: ইসমত আরা বেগম তার স্থায়ী জামিন আবেদন নাকচ করে এই আদেশ দেন।
সকালে আদালতে হাজিরা দিতে এলে তাকে দেখতে আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। প্রথমে তিনি কাঠগড়ায় না উঠে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন, পরে বিচারকের নির্দেশে কাঠগড়ায় ওঠেন। এরপর উভয় পক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ শুনানি শেষে দুপুরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
২০২০ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের বাসায় জেলা প্রশাসনের অভিযানে ঘটে এ ঘটনা। তাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদক রাখার মিথ্যা অভিযোগে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ঘটনার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন। পরবর্তীতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান বাদী হয়ে মামলা করেন।
দীর্ঘ পাঁচ বছর তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০২৫ সালের জুলাই মাসে সুলতানা পারভীনসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এ মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছিলেন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন। তবে আদালত তার স্থায়ী জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাদী সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান বলেন, সংবাদ প্রকাশ করাই তার অপরাধ ছিল না, অথচ তাকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন ও সাজা দেওয়া হয়েছিল। আজকের এই আদেশে তিনি ন্যায়বিচারের প্রথম ধাপ দেখতে পাচ্ছেন। তিনি আশা করছেন, শেষ পর্যন্ত বিচার সম্পন্ন হবে এবং দোষীদের শাস্তি হবে।
এই মামলার রায় এখন পুরো দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অনেকের মতে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতীক। তবে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে নতুন করে আইনগত লড়াইয়ে যাবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফলে মামলার পরবর্তী ধাপেও উত্তেজনা ও নজরদারি অব্যাহত থাকবে।